রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বিস্তৃত হতে পারে শৈত্যপ্রবাহ

সর্বনিম্ন শ্রীমঙ্গলে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলতি সপ্তাহে ফের বৃষ্টির আভাস
যাযাদি ডেস্ক
  ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
বিস্তৃত হতে পারে শৈত্যপ্রবাহ

মাঘের হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে চারটি জেলা। দেশে কয়েকদিন ধরেই চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সেইসঙ্গে বেড়েছে কুয়াশার দাপট আর হিমেল বাতাস। এমন পরিস্থিতিতে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শৈত্যপ্রবাহের পরিধি আরও বিস্তৃত হতে পারে। শনিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে ঢাকায় গত দুদিন ধরে সূর্যের দেখা মিলেছে। এতে কুয়াশা কিছুটা কেটে গেলেও বাড়ছে না তাপমাত্রা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর শনিবার বিকালে আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর ও মৌলভীবাজার জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উপমহাদেশীয় উচ্চতাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এছাড়া অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা কমতে পারে।

সংস্থাটি জানায়, কাল ২২ জানুয়ারি সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা সারাদেশে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা দুপুর পর্যন্ত কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকতে পারে। সেইসঙ্গে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

চলতি মাসের শেষদিকে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে জানিয়ে শনিবার বিকালে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানান, আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশে ফের ঘন কুয়াশা বাড়তে পারে।

তীব্র শীতে জর্জর দিনাজপুরের মানুষ : জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, শনিবার সকালে দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়

বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। বাতাসের গতি ১ নটস। জেলায় চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই উত্তরাঞ্চলের জেলাটিতে বেড়েছে শীতের দাপট। শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। শীতের পাশাপাশি ঘন কুয়াশায় সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপালস্নার পরিবহণ চলছে ধীরগতিতে।

এদিকে তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের দিতে হচ্ছে বেশি টাকা। এতে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ।

কৃষক শফিউল ইসলাম বলেন, 'শীত বেশি হওয়ায় বোরো ধানের বীজতলাগুলো হলুদ ও লালচে হয়েছে। যে হারে কুয়াশা হচ্ছে তাতে টেনশনে আছি বীজতলা নষ্ট হলে বোরো ধান লাগাবো কীভাবে।'

কৃষি শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'কুয়াশা আর ঠান্ডা বাতাসের কারণে কাজে যোগ দিতে পারছি না। এই ঠান্ডা আর বাতাসে কাজ করতে গেলে হাত-পা কোকড়া লাগি যাছে। আবার কাজ না করলে সংসার চলাব কীভাবে খুব কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।'

কিরণ রায় নামের এক অটোচালক বলেন, 'দুপুরের আগে মানুষ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। কারণ গত দু'দিন ধরে সূর্যের দেখা মিলছে, দুপুরের পর বিকাল হতে না হতে ফির হারে যাছে সূর্য। মানুষের চলাচল কমছে রাস্তায়, তাই ভাড়া কম, কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে।'

সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর ফেরি চলাচল শুরু

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌরুটে প্রায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নদীতে কুয়াশার ঘনত্ব কমে গেলে এ রুটে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু করে কর্তৃপক্ষ। এর আগে শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্পোরেশন (বিআইডবিস্নউটিসি)।

বিআইডবিস্নউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সালাহউদ্দিন জানান, ঘন কুয়াশার কারণে নদীপথের মার্কিং আলো অস্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে রাত দেড়টা থেকে এই নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কুয়াশার ঘনত্ব কমে যাওয়ায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুনরায় ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। আটকে যাওয়া যানবাহনগুলো সিরিয়াল অনুযায়ী পার করা হচ্ছে। বর্তমানে এ রুটে ছোট-বড় ১৫টি ফেরি চলাচল করছে।

রাজশাহীতে সর্বনিম্ন ৯.৮ ডিগ্রি

চলতি বছর রাজশাহীতে শীত নেমেছে দেরি করে। আগে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়েই মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কবলে থাকতো রাজশাহী। কিন্তু গত প্রায় ৩-৪ বছর থেকে সেই অর্থে শীত পড়েনি। চলতি বছর ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে তাপমাত্রা নেমেছে দু-দিন। দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গড়ে ১০ ডিগ্রি থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই ওঠানামা করছে।

তবে শনিবার সকালে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে জেলার তাপমাত্রা এক লাফে নেমেছে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফের শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এদিন সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগেরদিন যা ছিল ১৩.৮ ডিগ্রি। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯.৬ ডিগ্রি। আর এটিই ছিল রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এখন পর্যন্ত এর নিচে দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আর নামেনি।

তবে এই শীতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাজশাহীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। 'সর্বনিম্ন' তাপমাত্রা খুব নিচে না নামলেও রোদ না ওঠায় কম থাকছে 'সর্বোচ্চ' তাপমাত্রা। আর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে আসায় হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে বিকালের আগে সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। আর রোদ ওঠার কিছুক্ষণ পরই মেঘ বা কুয়াশায় তা ঢেকে যাচ্ছে। মেঘ এবং ঘন কুয়াশার মধ্যেই বইছে উত্তরের হিমেল হাওয়া।

এতে শীতার্ত মানুষগুলো যারপরনাই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বিশেষ করে বস্তি এলাকা, রেলওয়ে স্টেশন ও বিভিন্ন ফুটপাতের ওপর খোলা আকাশের নিচে থাকা ভাসমান মানুষগুলোর জীবন অসহনীয় এবং অবর্ণনীয় হয়ে উঠেছে। একদিকে শীতের কষ্ট; আরেক দিকে ক্ষুধার। কনকনে শীতের এই একেকটি দিন তাদের কাছে পাহাড়ের মতো হয়ে উঠেছে। শীতের হাত থেকে বাঁচতে পথের ধরে খড়কুটো, পস্নাস্টিক, টায়ার ইত্যাদি জ্বালিয়ে তারা শীতের কামড় থেকে বাঁচার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘুরে ঘুরে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ প্রায়দিনই নিজে ঘুরে ঘুরে ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষগুলোর মধ্যে কম্বল বিতরণ করছেন। এখনো কম্বল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে রাজশাহী জেলায় ৬৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে