ভারতের বিপক্ষে এগিয়ে থেকেও হৃদয় ভাঙার গল্প হরহামেশাই লিখে থাকে বাংলাদেশ। তবে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনালে এবার উল্টো গল্প লিখেছে মেয়েরা। নেপালের মাঠে ভারতকে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফাইনাল ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র ছিল। টাইব্রেকারে বাংলাদেশ ৩-২ গোলে ভারতকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়। বাংলাদেশের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগম। ভারতের পাঁচ শটের মধ্যে তিনটি তিনি সেভ করেন। বিশেষ করে ভারতের শেষ শট তিনি সেভ করায় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উলস্নাস করতে পেরেছে। রাউন্ড রবিন পর্বে এই ভারতের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা।
বয়সভিত্তিক এই টুর্নামেন্টে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় শিরোপা। এর আগে ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশের কিশোরীরা। ২০২৩ সালে লিগ পদ্ধতিতে হওয়া টুর্নামেন্টে রাশিয়ার পেছনে থেকে হয়েছিল রানার্সআপ। এবার অবশ্য অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
এই জয়টি বাংলাদেশ ও কোচ সাইফুল বারী টিপুর জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও সন্তুষ্টির। কারণ মাসখানেক আগে ঢাকায় অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরের ফাইনালে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে ট্রফি ভাগাভাগি করতে হয়েছিল। সেই ম্যাচটিও পেনাল্টিতে গিয়েছিল, কিন্তু প্রতিটি দলের ১১টি শটের পরেও বিজয়ী খুঁজে পায়নি। এরপর কিছুটা বিতর্কের পর ভাগাভাগি করা হয় ট্রফিটি।
রোববার নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপেস্নক্সে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলার শুরু থেকেই চাপ প্রয়োগ করে খেলতে থাকে ভারতের মেয়েরা। বাংলাদেশ ছিল এলোমেলো। ভুল পাস ও সমন্বয়হীনতায় শুরুর দিকে ছন্নছাড়া ছিল সাইফুল বারী টিটুর দল। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যায় ভারত। মাঝ মাঠ থেকে উড়ে আসা বল ঠিকঠাকমতো ডিফেন্স
করতে পারেননি বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। বল বের করে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন আনুসকা কুমারী। তিনি বাম দিকে ঢুকে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়িয়ে দেন দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে। বিরতির বাঁশির দুই মিনিট আগে বাংলাদেশ সমতায় ফেরার ভালো সুযোগ পেয়েছিল। সাথীর কর্নার রুখে দেন ভারতের গোলরক্ষক মুন্নী। প্রথমার্ধে ভারত ১-০ গোলে এগিয়ে যায়। ৭০ মিনিটে বাংলাদেশের মরিয়ম বিনতে আন্না গোল করে খেলায় সমতা আনেন। কোনো দল আর গোল করতে না পারায় নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হয় ১-১ এ। ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ হয় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারের শুরুটা অবশ্য বাংলাদেশের ভালো হয়নি। দলের হয়ে প্রথম শট নেওয়া সুরভী আকন্দ প্রীতি মিস করেন। তার শট ঠেকিয়ে দেয় ভারতের গোলরক্ষক। টাইব্রেকারের জন্যই ভারতীয় কোচ ম্যাচ শেষ হওয়ার এক মিনিট আগে গোলরক্ষক পরিবর্তন করেন। ভারত প্রথম শটে গোল করলে বংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে।
ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শট টানা সেভ করে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখেন ইয়ারজান বেগম। পক্ষান্তরে মারিয়াম ও থুইনি মারমা গোল করলে বাংলাদেশ ২-১ এর লিড পায়। ভারত চতুর্থ শটে গোল করলে স্কোরলাইনে আবার সমতা হয়। বাংলাদেশের পঞ্চম শটে সাথী মুন্ডা গোল করেন। ভারতকে খেলায় টিকে থাকতে হলে পঞ্চম শটে গোল করতেই হতো। বাংলাদেশের গোলরক্ষক শেষ শট সেভ করায় ৩-২ স্কোরলাইনে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
নির্ধারিত সময়ের প্রথমার্ধে ভারত ম্যাচে লিড নেয়। প্রথমার্ধে বাংলাদেশ সেভাবে খেলতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ খেলায় সমতা আনে। আর গোল না হওয়ায় ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়ায়।
গত মাসে ঢাকায় কমলাপুরে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ও ভারত যুগ্ম-চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ঐ ম্যাচেও নির্ধারিত সময়ে স্কোরলাইন ১-১ ছিল। টাইব্রেকারে দুই দলই ১১ গোল করে। পরবর্তীতে আকস্মিকভাবে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ম্যাচ কমিশনার টস করেন। টসে ভারত জিতে উলস্নাস করে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ আপত্তি জানায়। পরবর্তীতে সাফ যুগ্ম-শিরোপা ঘোষণা করে।
বাংলাদেশ একাদশ :ইয়ারজান বেগম, অর্পিতা বিশ্বাস, শিউলি রায়, আরিফা আক্তার, সাথী মুনদো, আলপি আক্তার, ক্রানুচিং মারমা, ফাতেমা আক্তার, সুরভী আকন্দ প্রীতি।