সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট নিহত

চট্টগ্রাম অফিস ও কর্ণফুলী প্রতিনিধি
  ১০ মে ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রামে বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট নিহত
অসীম জাওয়াদ

আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় আগুন ধরে বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানটি গড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর মোহনায়। এর আগে বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট প্যারাসুটে অবতরণ করেন। পরে দুই পাইলটকে পতেঙ্গা নৌবাহিনীর ঈসা খাঁ ঘাঁটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিমানের স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদের মৃতু্য ঘটে। উইং কমান্ডার সুহান একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

1

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিমান বাহিনীর ইয়াক-১৩০ সিরিজের একটি যুদ্ধবিমান উড়ন্ত অবস্থায় আগুন লেগে বিধ্বস্ত হয়। সেটি কর্ণফুলী নদীর ১১ নম্বর মাতব্বর ঘাট এলাকায় পতিত হয়।

যুদ্ধবিমানের দুই পাইলটকে আহত অবস্থায় পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খাঁ হাসপাতালে (নেভি হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাইলট অসীম জাওয়াদের মৃতু্য হয়। আহত কো-পাইলট মো. সুহান চিকিৎসাধীন আছেন।

সূত্রমতে, বিমানের পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদ মানিকগঞ্জ জেলার মোহাম্মদ আমানউলস্নার পুত্র, তিনি বিমান বাহিনীর জহরুল হক ঘাঁটির অফিসার্স আবাসিক এলাকার নীলিমা-১ এ থাকতেন। পরিবারে তার স্ত্রী ও এক মেয়ে, এক ছেলে রয়েছে।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইব্রাহিম খলিল বলেন,

সকাল ১০টার দিকে বিমানবাহিনীর ইয়াক-১৩০ সিরিজের একটি প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়ন করে। ১০টা ২৮ মিনিটের দিকে উড়ন্ত অবস্থায় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এ সময় বিমানের পাইলট ও কো-পাইলট প্যারাসুটে নেমে আসে। পরে বিমানটি টার্মিনালের বে এরিয়ায় বিধ্বস্ত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানটি নৌ-বাহিনীর বোট ক্লাবের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখা যায়। এ সময় বিমানটির পেছনে আগুন ধরে যায়। বিমানটি একটি চক্কর দিতেই বিধ্বস্ত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়ে যায়। এ সময় দুইজন পাইলট প্যারাসু্যটের সাহায্যে নেমে আসেন। একজন নদীতে পড়েন অপরজন নদীর পাড়ে বাঁধের পাথরে উপর পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা মো. পারভেজ বলেন, আমি নৌকা করে মাতব্বর ঘাট থেকে শহরে যাওয়ার সময় আকাশে একটি বিমানে আগুন দেখি। মুহূর্তের মধ্যেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে আছড়ে পড়ে। এসময় বিমানের দুই পাইলট প্যারাসু্যট নিয়ে লাফ দিলে একজন নদীতে পড়ে অপরজন নদীর পাড়ে বাঁধের পাথরে পড়ে।

তিনি বলেন, 'আমরা নদীতে পড়া উইং কমান্ডার মো. সুহানকে উদ্ধার করে নৌকায় তোলে নিই। এরপর অপরজনকে উদ্ধার করতে গেলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক অবস্থায় দেখি। পরে তাকে আমাদের কাছ থেকে নৌবাহিনীর সদস্যরা হাসপাতালে নিয়ে যায়।'

কর্ণফুলী মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের ইনচার্জ মো. ইসমাইল বলেন, বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের খবর শুনে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। আমাদের ডুবুরি টিমের সদস্যরাও এখানে রয়েছে। বিমানটি উদ্ধারে নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীর নিজস্ব ইউনিটের সঙ্গে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিমও কাজ করছে।'

সরেজমিন দেখা যায়, নদীতে বিধ্বস্ত বিমানের এলাকা নৌ-বাহিনী ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছে। দুই পাড়ে উৎসুক জনতার ভিড় জমেছিল।

সদরঘাট নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একরাম উলস্নাহর তথ্যমতে, নিহত স্কোয়াড্রন লিডার অসিম জাওয়াদ ২০০৭ সালে এসএসসি ও ২০০৯ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- ৫ পেয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন, সাভার ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স একাডেমিতে যোগদান করেন।

২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে কমিশন লাভ করেন পাইলট অফিসার হিসেবে। তিনি ছিলেন এফ-৭ এমজি-১ এর অপারেশনাল পাইলট ও এলিমেন্ট লিডার। তিনি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে জাতিসংঘের মিশনে নিয়োজিত ছিলেন।

বিভিন্ন কোর্সের তাগিদে ভ্রমণ করেছেন চীন, ভারত, তুরস্ক ও পাকিস্তানে। তিনি ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টর'স স্কুল অফ বিএএফ-এ স্টাফ ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। অসিম জাওয়াদ নিজের ট্রেনিং জীবনে সকল বিষয়ের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পেয়েছেন গৌরবমন্ডিত সোর্ড অফ অনার।

এসসিপিএসসি-থেকে এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র সোর্ড অফ অনার বিজয়ী। ফ্লাইং ইনস্ট্রাক্টরস কোর্সে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পেয়েছেন মফিজ ট্রফি। এছাড়া তার দায়িত্বশীলতা ও কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার জন্য প্রশংসা পেয়েছেন চিফ অফ এয়ার স্টাফ থেকে।

এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক জাওয়াদের মর্মান্তিক বিদায়ে বিমান বাহিনীর পাশাপাশি সেনা ও নৌ বাহিনীর সহকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

উলেস্নখ্য, রাশিয়ার সমরাস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ইরকুত করপোরেশনের তৈরি ইয়াক-১৩০ যুদ্ধবিমানটি সাবসনিক দুই সিটের উন্নত জেট প্রশিক্ষণ এবং হালকা যুদ্ধ বিমান। যুদ্ধবিমানটি ১৯৯৬ সালে প্রথম আকাশে উড্ডয়ন করে। এরপর ২০০২ সালে এটি রুশ সামরিক পাইলটদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রধান আকাশযান হিসেবে নির্বাচন করা হয়। ২০১৫ সালে এই যান প্রথম বাংলাদেশে আসে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে