বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

পতিত সরকারের আমলে প্রশাসন রাজনীতির কাছে জিম্মি ছিল

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিকে আমলারা
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পতিত সরকারের আমলে প্রশাসন রাজনীতির কাছে জিম্মি ছিল
জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির ব্রিফিংয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবিটি রোববার তোলা -সংগৃহীত

'পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়নের যে বয়ান দেওয়া হয়েছে, তা গভীর করার ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রশাসনের ভূমিকা ছিল। এমনকি সেই প্রক্রিয়ায় তারা আইনি কাঠামো অতিক্রম করে গেছে। বাস্তবতা হলো, প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে রাজনীতির কাছে জিম্মি ছিল। আমলাদের মধ্যে কেউ কেউ সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যত্যয় ঘটাতে পেরেছেন। তার জন্য সেই আমলাদের পেশাগত ক্ষতি হয়েছে। পেশাগত উন্নতির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে।'

রোববার রাজধানীর পরিকল্পনা কমিশনের একনেক সম্মেলনকক্ষে জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এদিন সরকারের ৮৫ জন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেছে শ্বেতপত্র কমিটি। বৈঠকে ৩২ জন সচিব ও সিনিয়র সচিব উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ আমলারা দীর্ঘক্ষণ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তা অভূতপূর্ব হিসেবে আখ্যা দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তারা বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যবচ্ছেদ করেছেন, এটাকে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করেন তিনি।

আমলাদের পেশাগত সমিতিগুলো কেন সুরক্ষা দিতে পারেনি, শ্বেতপত্র কমিটির এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেছেন, আমলাতন্ত্রের পেশাগত কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সংগঠনগুলোর দলীয়করণ করা হয়েছিল। সংগঠনের নেতারা সুবিধাবাদী রাজনীতির অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে যৌথভাবে ভূমিকা পালনের অবকাশ ছিল না।

প্রকল্পের মাধ্যমে যে সরকারি অর্থের লুণ্ঠন হয়েছে, তাতে উন্নয়ন প্রশাসনের কী ভূমিকা ছিল- শ্বেতপত্র কমিটির এ প্রশ্নের উত্তরে আমলারা বলেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের মুখে পড়তে হয়েছে। প্রকল্প প্রণয়নের ক্ষেত্রে গাফিলতি থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বেড়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাইপ্রক্রিয়ায় দুর্বলতা ছিল। অনেক ক্ষেত্রে আবার ইচ্ছা করে দুর্বল প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। অনেক প্রকল্প ভুলভাবে টেকসই দেখানো হয়েছে।

দেবপ্রিয় আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের ত্রিমুখী সংযোগের কারণে দুর্নীতি হয়েছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা ও চলমান সংস্কার কাজ ঠিক মতো হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। কমিটিপ্রধান বলেন, দ্রম্নত শ্বেতপত্র প্রধান উপদেষ্টার হাতে দেয়া হবে। এরপর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে এটি নিয়ে কী করা হবে।

তিনি বলেন, আমলাদের মধ্যে কেউ কেউ সাহস নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যত্যয় ঘটাতে পেরেছেন। তার জন্য সেই আমলাদের পেশাগত ক্ষতি হয়েছে। পেশাগত উন্নতির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। সিনিয়র আমলারা দীর্ঘক্ষণ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তা অভূতপূর্ব হিসেবে আখ্যা দেন তিনি।

রোববার বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রকল্প নিয়েও আলোচনা হয়েছে, যেমন হাইটেক পার্ক, কর্ণফুলী টানেল, জ্বালানি খাত, সামাজিক সুরক্ষা, রাজস্ব সংগ্রহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা। ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ভূমিকা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

আমলারা মনে করছেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নে পেশাগতভাবে দক্ষ আমলাতন্ত্রের

ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এটা যেমন কেন্দ্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি স্থানীয় পর্যায়েও গুরুত্বপূর্ণ। তুলনামূলক স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দাবি করেছেন তারা।

সক্ষমতা, সদিচ্ছা, সমন্বয়- তিনটি ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করছেন আমলারা। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমলাদের মধ্যে এক ধরনের সততা ও আন্তরিকতা দেখা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে