বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

পরিবর্তন আনতে তরুণদের স্বপ্ন দেখার আহ্বান ড. ইউনূসের

'তরুণরা রাজনীতিবিদ নয় এবং কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাও তারা করছে না। তবে তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন দেশ চায়'
যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পরিবর্তন আনতে তরুণদের স্বপ্ন দেখার আহ্বান ড. ইউনূসের
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে রোববার ঢাকার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক ক্রেস্ট প্রদান করেন -স্টার মেইল

দেশে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তরুণদের মনস্থির করার ও স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে এনডিসি ও এফডবিস্নউসি কোর্সের সদস্যদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আমি বিশেষ করে তরুণদের তাদের মনস্থির করতে, চিন্তা করতে ও স্বপ্ন দেখতে উৎসাহিত করি। স্বপ্ন হলো পরিবর্তনের সূচনা। স্বপ্ন দেখলে পরিবর্তন হবে। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন তবে এটি কখনোই হবে না।'

তরুণদের দিকে ইঙ্গিত করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, 'নিজেকে প্রশ্ন করুন আমি বিশ্বের জন্য কী করতে পারি? একবার আপনি কী করতে চান তা বুঝতে পারলে আপনি তা করতে পারবেন, কারণ আপনার সেই ক্ষমতা রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম এখন সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। তারা যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার কারণে নয় বরং তাদের হাতে প্রচুর প্রযুক্তি রয়েছে বলে।'

প্রযুক্তিকে আলাদিনের চেরাগ উলেস্নখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আপনি যদি ছাত্র বিপস্নবের দিকে তাকান, তবে এটি প্রযুক্তির বিষয়। তারা একে অপরের সঙ্গে খুব দ্রম্নত যোগাযোগ করতে পারত। তাদের কোনো কমান্ড কাঠামো ছিল না।'

ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপস্নব সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের তরুণ যুবকরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়।

তিনি বলেন, তরুণরা রাজনীতিবিদ নয় এবং কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টাও তারা করছে না। তবে তারা নিজেদের জন্য একটি নতুন দেশ চায়।

বিশ্বশান্তির কথা উলেস্নখ করে ২০০৬ সালের নোবেল শান্তি বিজয়ী বলেন, বেশির ভাগ সময় ২

মানুষ শান্তির নামে একে অপরকে হত্যা করে।

তিনি বলেন, '...কিন্তু আমরা প্রতিদিন আমাদের সমস্ত উচ্চারণ ও আমাদের সমস্ত দর্শনে নিজেদের প্রতিশ্রম্নতিবদ্ধ করি। আমরা শান্তি চাই। দেশের ভেতরে শান্তি, সকল দেশের মধ্যে শান্তি এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি।'

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর মনে হয় যে, বিশ্বের প্রতিটি সরকারেরই একটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আছে, যা আক্ষরিক অর্থে এটি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়, কিন্তু কোনো শান্তি মন্ত্রণালয় নেই।

তিনি প্রশ্ন করেন, 'যদি আপনার লক্ষ্য শান্তি হয়, তাহলে আপনার কি শান্তি মন্ত্রণালয় থাকা উচিত নয়?'

আক্রমণের বিরুদ্ধে জনগণকে নিজেদের রক্ষা করতে হবে- এটি পর্যবেক্ষণ করে অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের সরকারগুলোতে শান্তি মন্ত্রণালয় ও যুদ্ধ মন্ত্রণালয় উভয় মন্ত্রণালয়ই রাখার ওপর জোর দেন।

তিনি প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেসহ বৈদেশিক সম্পর্কে শান্তি অ্যাটাশে প্রবর্তনের পরামর্শ দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি আত্ম-ধ্বংসাত্মক গ্রহ। কেননা আমরা শুধু নিজেদের হত্যা করার জন্য প্রস্তুত সবকিছু করেছি।'

একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষ গ্রহ ধ্বংস করতে পরিবেশ ধ্বংস করছে।

প্রতিদিন মানুষ গ্রহকে ধ্বংস করছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'আমরা একটি ভুল সভ্যতা তৈরি করেছি- আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা।'

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস তার বক্তব্যে এনডিসি ও এএফডবিস্নউসি কোর্সের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের সাফল্য কামনা করেন।

আসিয়ানের সদস্য হতে ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন চান

এদিকে, আসিয়ানে বাংলাদেশের সদস্যপদে ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিকে বাংলাদেশিদের ব্যবসায়ের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করার আহ্বান জানান তিনি।

রোববার বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হেরু হারতান্তো সুবোলো ঢাকার তেজগাঁওস্থ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে বলেন, 'আমি আশা করি ইন্দোনেশিয়া আমাদের আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে সাহায্য করবে। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।'

প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূতকে আরও জানান, তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরের সময়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। আগামী জানুয়ারিতে মালয়েশিয়া আসিয়ানের সভাপতিত্ব গ্রহণ করবে।

রাষ্ট্রদূত সুবোলো বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রতি তার দেশের সমর্থন জানান। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া আসিয়ান সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদন নিবিড়ভাবে অনুসরণ করবে। ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। আশা করি এটি উভয় দেশের জন্য উপকারী হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ক্ষুদ্রঋণ প্রচারের জন্য ইন্দোনেশিয়ায় তার একাধিক সফরের কথা স্মরণ করেন। তার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশি ব্যবসার খুব কম উপস্থিতি দেখেছেন বলেন জানান।

তিনি বলেন, একটা বিষয় সবসময় অনুশোচনার যে, ইন্দোনেশিয়ায় খুব বেশি বাংলাদেশি নেই। বাংলাদেশিরা সর্বত্র আছে কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় নেই।

তিনি আরও বলেন, 'ইন্দোনেশিয়া বৃহত্তম মুসলিম দেশ। কিন্তু সে দেশের মানুষ বাংলাদেশ সম্পর্কে তেমন জানেন না। আমরা খুব বেশি যোগাযোগ করছি না। আমাদের কাছাকাছি আসার জন্য অবশ্যই একটি উপায় খুঁজে বের করতে হবে।'

তিনি ইন্দোনেশিয়াকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তিসহ বাংলাদেশি চিকিৎসক নিয়োগ এবং বাংলাদেশ থেকে ওষুধপত্র আমদানি করার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত সুবোলো বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করার প্রতিশ্রম্নতি দেন।

তিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মাতারবাড়ী এবং অন্যান্য এলাকায় সোলার পিভি বিনিয়োগ প্রকল্পের বিষয়ে পারটামিনা পাওয়ার ইন্দোনেশিয়া এবং কোল জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষরের বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইন্দোনেশিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট প্রবোও সুবিয়ানতোকে তার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান এবং সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে