অবশেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বের) তিনি চসিক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। একই সঙ্গে কাউন্সিলর না থাকায় ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৩ নভেম্বর) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তাকে শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সরকার শুধুই কেয়ারটেকার সরকার না, গণ-অভু্যত্থানে অংশগ্রহণকারী নিহত-আহতদের আমানত। এই সরকার রুটিন কেয়ারটেকার সরকার নয়, আন্দোলনের পর বিশেষ প্রেক্ষাপটে গঠিত হয়েছে এই সরকার। তাই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেশি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কাউন্সিলর না থাকায় ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে যারা মেয়রের নেতৃত্বে কাজ করবেন। সিটি করপোরেশনগুলোতে শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। বর্তমান চট্টগ্রামের মেয়রের মেয়াদ আইন অনুযায়ী যেটা হবে, ততদিন তিনি দায়িত্বে থাকবেন।
শপথ নিয়ে
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, 'চট্টগ্রাম বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে। যদি চট্টগ্রাম শহরের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপ করা যায়- বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি। গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি, হেলদি সিটি- এসব আমার নির্বাচনী ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব।'
অনুষ্ঠানে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফুল হক চৌধুরী বলেন, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে দলের শীর্ষ নেতা, মেয়রের আত্মীয়-স্বজনসহ ২৭ জন অতিথি উপস্থিত ছিলেন।
জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন জিতেছিলেন। কিন্তু তার ফল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হিসেবে শাহাদাতকে স্বীকৃতি দেওয়ায় অন্তর্র্বর্তী সরকার ও বিচারকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফখরুল।
রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র শাহাদাত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
শপথ নেওয়ার পর বিএনপির মহাসচিবসহ দলটির নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শাহাদাত হোসেন।
এ সময় অন্তর্র্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা (অন্তর্র্বর্তী সরকার) আদালতের রায়কে মেনে নিয়ে ডা. শাহাদত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করিয়েছে। ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার যে অভু্যত্থান সেই অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্টদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে যেন এই ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসতে না পারে, জনগণের যে দুর্বার প্রতিরোধ এই প্রতিরোধ যেন ফ্যাসিবাদকে চিরতরে নির্মূল করে।
আগামী দিনগুলোতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, শাহাদাত হোসেনকে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণার পর প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ গত তিনটি নির্বাচন দখল করে নিয়েছে। এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুনভাবে সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি।
এদিকে, চসিকের নতুন মেয়রের আগমনকে ঘিরে মেয়রের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ হয়েছে। মেঝেতে বিছানো হয়েছে নতুন ফ্লোরমেট। মেয়রের জন্য বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার, বার্নিশের পর ঝকঝক করা হচ্ছে সব আসবাবপত্র। ফুলের টবসহ ইন্টেরিয়র ডিজাইনে কিছুটা বাহ্যিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া নগর ভবনে আয়োজন করা হয়েছে খতমে কোরআন ও খতমে গাউছিয়া।
সূত্রমতে, আগামীকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) ঢাকা থেকে সকালে রেলপথে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবেন ডা. শাহাদাত। দুপুরে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে দলীয় নেতারা ফুল দিয়ে স্বাগত জানাবেন। পরে সেখান থেকে হযরত আমানত শাহ এবং হযরত বদর শাহ (রহ.) এর দরগাহ জেয়ারত করবেন তিনি। এরপর তিনি সিটি করপোরেশনের নতুন ভবনে (লালদীঘির পাড়) একটি মিটিংয়ে উপস্থিত থাকবেন। পরে সেখানেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।
হাইব্রিডের ভিড়ে কোণঠাসা ত্যাগীরা, সতর্ক বিএনপি সেখান থেকে বাদে আসর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে খতমে কোরআন ও খতমে গাউছিয়া শেষে মোনাজাতে অংশ নেবেন। পরে সেখান থেকে বাসায় ফিরবেন। আর পরদিন থেকে নিয়মিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অফিস করবেন বলে জানা গেছে।
নতুন মেয়রকে বরণে প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'মেয়র মহোদয়কে বরণে আমাদের প্রস্তুতি চলছে। উনি শপথগ্রহণের পর কার্যালয়ে আসবেন। এরপর আমরা আমাদের আনুষ্ঠানিকতা সারব।'
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেন পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে ওই বছরের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি নির্বাচনী ট্রাইবু্যনালে রেজাউল করিমসহ ৯ জনকে বিবাদী করে মামলা করেছিলেন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। আদালত গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেন। ওইদিন আদালত ১০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করতে সরকারকে নির্দেশ দেন। আদালতের এ রায়ের ৮ দিনের মাথায় গত ৮ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনার সচিব শফিউল আজিম এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন।