ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানি পাওয়ার বিদু্যৎ সরবরাহ অর্ধেকে নামিয়ে আনার পর তাদের পাওনা দ্রম্নত পরিশোধ করতে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। বিষয়টির সুরাহা করতে আদানি ৭ নভেম্বরের যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে তার আগেই বাংলাদেশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিপিডিবির দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সূত্রের তথ্যানুযায়ী, ইতিমধ্যেই আদানি পাওয়ারকে আংশিক পেমেন্ট করা শুরু হয়েছে। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশের মোট বিদু্যতের ১০ শতাংশ সরবরাহ করে আদানি। বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা পেমেন্ট সমস্যার সমাধান করেছি। ইতিমধ্যে আদানি গ্রম্নপের অনুকূলে ১৭০ মিলিয়ন ডলারের লেটার অভ ক্রেডিট (এলসি বা ঋণপত্র) ইসু্য করেছি।'
ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা কয়লাবিদু্যৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদু্যৎ সরবরাহ করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে বিদু্যৎ সংকটে ভুগতে থাকা বাংলাদেশে বিদু্যৎ সরবরাহ কমানোর বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি আদানি পাওয়ার।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত, এমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদু্যৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে সমস্যায় পড়েছে আদানি পাওয়ার। তাই বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য ৭ নভেম্বরের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিপিডিবির কর্মকর্তা বলেন, 'সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আসবে বলে আমরা মনে করি না।'
কর্মকর্তারা বলেন, তারা ধীরে ধীরে এবং নিয়মিত পাওনা পরিশোধ করবেন। বকেয়া পাওনা পরিশোধের এই সমস্যার সমাধানে তারা
\হআত্মবিশ্বাসী। এদিকে আদানি আগে বাংলাদেশে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ সরবরাহ করলেও চলতি মাসে তা ৭০০-৮০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে এনেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, 'পেমেন্ট বাড়ানোর পরও সরবরাহ কমানো হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আমরা পাওনা পরিশোধ করতে প্রস্তুত এবং বিকল্প ব্যবস্থা নেব, কিন্তু কোনো বিদু্যৎ উৎপাদনকারীকে আমাদের জিম্মি করে বস্ন্যাকমেইল করার সুযোগ দেব না।'
তিনি জানান, আদানিকে বাংলাদেশ জুলাই মাসে ৩৫ মিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ৬৮ মিলিয়ন ডলার ও অক্টোবরে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। বিদু্যৎ সংকট তীব্র হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ ইতিমধ্যে ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিদু্যৎ, কয়লা ও তেল আমদানির জন্য ডলারের সংস্থান করতে সমস্যায় পড়ছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আগস্টে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচু্যত করা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে। ইতিমধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আগের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজের বাইরে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে।
অন্যদিকে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা বিদু্যৎ চুক্তিটি শেখ হাসিনার আমলে স্বাক্ষরিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার চুক্তিটিকে অস্বচ্ছ বলে উলেস্নখ করেছে। একটি জাতীয় কমিটি আদানিসহ মোট ১১টি চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করছে। উলেস্নখ্য, আদানি বাংলাদেশের কাছ থেকে বিদু্যতের দাম ভারতের অন্য বেসরকারি উৎপাদনকারীদের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি রাখছে।
আদানি পাওয়ারের পাশাপাশি এনটিপিসি লিমিটেড ও পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেডসহ ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশে বিদু্যৎ সরবরাহ করছে। বিপিডিবির কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, অন্যান্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের পাওনাও আংশিকভাবে পরিশোধ করা হচ্ছে।
বিদু্যতের সরবরাহ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ কয়েকটি গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র ফের চালু করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে বিদু্যতের খরচ আরও বাড়বে। শীতের মৌসুমে বিদু্যতের চাহিদা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, 'অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র ৫০ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। ডলার সংকটে পর্যাপ্ত কয়লা কেনা যাচ্ছে না। তাই আদানির রেডিমেড বিদু্যৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় উৎপাদনকারীদের চেয়ে তাদের বিদু্যৎ বেশি ব্যয়বহুল হলেও এই সরবরাহটা জরুরি।'