জুলাই-আগস্টের আন্দোলন ও সরকার পতনের জেরে অনেকটাই থমকে গিয়েছিল বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান। তবে সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে বিদেশগামী বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যা গত অক্টোবরে আরও গতি পেয়েছে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ বু্যরোর
(বিএমইটি) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ মাসে এক লাখ চার হাজার বাংলাদেশির বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান হয়েছে।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। অক্টোবরে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী গেছেন ৮৩ হাজার ৫৮২ জন। যা গত সেপ্টেম্বরে ছিল ৪৪ হাজার ২৪৯ জন। সেই হিসাবে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে সৌদিগামী প্রবাসীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। শুধু তাই নয়, অক্টোবরে যে পরিমাণ বাংলাদেশির দেশটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে, তা গত ৩৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। সৌদি আরবের পর কাতারে কর্মসংস্থান হয়েছে ছয় হাজার ৫০৭ বাংলাদেশি শ্রমিকের। এরপর রয়েছে- সিঙ্গাপুর, কুয়েত এবং জর্ডান।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বিদেশগামী কর্মীদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল- ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতা। এ ছাড়াও এ সময় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারও
বন্ধ ছিল। তাই প্রবাসে কর্মসংস্থান কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি। অন্যদিকে প্রতি মাসে প্রবাসে যাওয়া কর্মীদের বড় একটি সংখ্যা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই দেশে ফেরত আসছেন। যা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) জানিয়েছে, সম্প্রতিক সময় সৌদি আরবে অনেক বড় বড় প্রকল্প শুরু হয়েছে। ফলে দেশটিতে কর্মীর চাহিদা বেড়েছে। এই সুযোগে এজেন্সিগুলোর কর্মী পাঠানো বেড়েছে। দেখা গেছে, অনেক এজেন্সি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে সৌদি আরবে জনবল পাঠাচ্ছে। আর সেসব কর্মী বিদেশ গিয়ে কাজ না পেয়ে আবার দেশে ফেরত আসছেন। এছাড়াও অনেক বাংলাদেশি কর্মী দেশটির আবহাওয়া ও পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারায় দেশে ফেরত আসছেন।
এদিকে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৩৫০- ৪০০ জন অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে আসছেন। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ শ্রমিক মূলত ওয়ার্ক পারমিটের খরচ বাড়ানোর কারণে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসছেন। ইকামা ফি এখন বছরে ১১ হাজার সৌদি রিয়াল। এটি অনেক শ্রমিকের বার্ষিক আয় থেকেও বেশি।
বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। যাদের বড় একটি অংশই নির্মাণ শ্রমিক। এ ছাড়াও পরিছন্নতা ও গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন অনেকেই। বায়রার তথ্যানুযায়ী, সৌদির নিয়োগকর্তারা এই টাকা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন। দেখা গেছে, একসঙ্গে একজন নিয়োগকর্তার গড়ে ৪০০-৫০০ শ্রমিকের ইকামা ফি দিতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বায়রার নেতারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করেছেন, যাতে সৌদি কর্তৃপক্ষ ইকামা পুনর্বিবেচনা করে, এর চেষ্টা যেন তিনি করেন।
রিয়েল এস্টেট সেবা কোম্পানি জেএলএল'র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে সৌদি আরব বিশ্বব্যাপী নির্মাণ কার্যক্রমের শীর্ষে রয়েছে। এ ছাড়াও ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষা রয়েছে। ফলে নতুন বছরের অর্থাৎ ২০২৫ সালে দেশটিতে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।
এদিকে, জেএলএল'র সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের মোট নির্মাণ প্রকল্পের ৩৯ শতাংশ সৌদি আরবের হাতে রয়েছে। আরব নিউজে এ বছর জুন মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব প্রকল্পের মোট মূল্য ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২.৩৯ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের এই সময়ে ছিল ১.৯৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে ২১.৩২ শতাংশ। এমনকি সেপ্টেম্বর মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। তাই প্রবাসীদের সুরক্ষা ও রেমিট্যান্স প্রবাহ অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।