নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি কোনো আপস করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার বিকালে কৃষক দলের প্রশিক্ষণ কর্মক্রমের এক অনুষ্ঠানে তিনি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঠপর্যায়ে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

কাকরাইলে ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধন ও আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তারেক রহমান। সভায় কৃষক দল আগামী তিন মাস ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, 'কয়েকদিনের মধ্যে আপনারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন, একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলবেন, আপনি হয়ত একজন গৃহিণী, একজন ছোট দোকান কর্মচারী কিংবা মালিকের সঙ্গে কথা বলবেন। এ রকম বহু শ্রেণি -পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন, তাদের প্রত্যেককে একটি ম্যাসেজ দিতে হবে, ভাই তুমি যে রাজনীতিতেই বিশ্বাস কর না কেনো, একটি জায়গায় এসে দাঁড়াও। অর্থাৎ তুমি যাকে ইচ্ছা ভোট দাও, কিন্তু ভোট যাতে হয়, এ ব্যবস্থাটা করতে হবে যেকোনো মূল্যে।'

তারেক রহমান বলেন, 'আমাদের স্পষ্ট বার্তা- নিরপেক্ষভাবে ভোট হতে হবে। এটার সঙ্গে কোনো কম্প্রমাইজ নেই। যদি এটি নিশ্চিত করা যায় ইনশালস্নাহ ধীরে ধীরে আমরা দেশের সমস্যার সমাধান, মানুষের সমস্যার সমাধান কমিয়ে আনতে সক্ষম হব। কাজেই এর সঙ্গে কোনো আপস নেই।'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'তোমার যাকে ইচ্ছা তুমি ভোট দাও। আমাকেও ভোট দেওয়ার দরকার নেই, তোমার যাকে ইচ্ছা মনে হয়, তোমার বুদ্ধি-বিবেক, জ্ঞান দিয়ে তাকে ভোট দাও। কিন্তু ভোট হতে হবে সকাল-বিকাল। যাকে খুশি আমি ভোট দেব, নিশ্চিন্তে নিরাপদে ভোট দেব- এটা সঙ্গে কোনো কম্প্রমাইজ নেই, কোনো আপস নেই। এই ম্যাসেজটা আপনাদের

নিয়ে যেতে হবে।'

তারেক রহমান বলেন, 'ওই ডামি নির্বাচন হবে না, নিশিরাতে নির্বাচন হতে পারবে না। দিনের আলোতে ভোট হতে হবে, যাকে খুশি তাকে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে, নিরাপদে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। কেউ কাউকে ডিস্টার্ব করবে না ভোট দেওয়ার সময়। ভোটকেন্দ্রে যাবে লাইন ধরবে, ভোট দিয়ে আসবে, তার মত সে প্রকাশ করবে, কোনো ভয় থাকবে না, ভীতি থাকবে না।'

তিনি বলেন, 'দেশ, দেশের মানুষ এবং এ দেশের জাতীয়তাবাদী শক্তি এই তিনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। প্রতিনিয়তই পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন নিউজের মাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, বিভিন্ন টেলিফোন আলাপেও আপনারা কমবেশি জানতে পারছেন। জাতীয়তাবাদী শক্তির সব নেতাকর্মীদের বলব, ষড়যন্ত্রের যে ষড়যন্ত্র থেমে নেই, এ কথাটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।'

তিনি বলেন, 'বাজারমূল্যের যে সিন্ডিকেট তা ভাঙা সম্ভব হবে না। কারণ, এটিকে যদি ভাঙতে হয়, বাজারের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হয়, তাহলে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি দরকার। যারা মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। যেদিন এ রকম একটি সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হবে, সেদিনই বাজার পরিস্থিতি অনেকাংশে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করে নিয়ে আসা যাবে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।'

তিনি বলেন, 'ঠিক একইভাবে শিক্ষা বলেন, শিল্প বলেন, দেশের যে ব্যবস্থার কথা বলেন না কেনো, সেটাকে যদি উন্নত করতে হয়, দুর্নীতিকে যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসতে হয়, যেটার কথা বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা যেটারই উন্নত করতে চাই না কেনো, জনগণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে না পারলে জনগণের কাছে জবাবদিহি করে এ রকম ব্যক্তিদের সামনে আনতে না পারলে কোনোভাবেই আমরা কিছু করতে পারব না।'

ক্ষমতায় গেলে বিভিন্ন পরিকল্পনার বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, 'বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের স্বার্থে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইনশাআলস্নাহ বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে আমরা শহীদ জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি শুরু করব। এটি আমাদের শুরু করতে হবে কৃষকের পানির সুবিধার কারণে, রিজার্ভ ওয়াটারের কারণে। পানির লেভেল নিচে নেমে গেছে, এটাও কিন্তু আমাদের বিপদের কারণ। এমন অনেক কারণেই আমাদের খাল খনন করতে হবে। পানির অভাবে ফসল উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। খাল খননের মাধ্যমে শহীদ জিয়া পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যেখানে একটি ফসল হতো, সেখানে পানির কারণে দুটি হয়েছিল, দুটি ফসলের জায়গায় তিনটি ফসল হয়েছিল।'

কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সাধারণ সম্পাদক পদ স্থগিত থাকা নেতা শহিদুল ইসলাম বাবুল, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।