জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে আজারবাইজানের বাকুতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন, (কপ-২৯)। সোমবার সকালে পস্ন্যানারি সেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা হবে। সম্মেলন চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত। এতে বিশ্বের ১৯৩টি দেশ অংশগ্রহণ করবে। এরমধ্যে ১১৮টি দেশের সরকারপ্রধান অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, পরিবেশবিষয়ক সংগঠন, গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার প্রায় ২৫ হাজার প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশের পরিবেশবাদী সংগঠন ও প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিরাও সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।
প্রথম দিন পস্ন্যানারি সেশন দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন হবে। এরপর কারিগরি বিষয় নিয়ে বিশ্বের জলবায়ু গবেষকরা তাদের প্রবন্ধ তুলে ধরবেন। পরে হবে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। সর্বশেষ সরকার প্রধানরা আলোচনা করে বাকু চুক্তি ঘোষণা করবেন। ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমাবেন এবং পৃথিবী নামক গ্রহকে বাঁচাতে কার্যকরী উদ্যোগের আহ্বান জাবেন বিশ্ব নেতারা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা
জানান, আজারবাইজানের বাকুতে কপ-২৯ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অংশ গ্রহণ করবেন। তিনি আজ আজারবাইজানের উদ্দেশে রওনা হবেন। তিন দিনের সফরে তিনি ১১ থেকে ১৪ নভেম্বর আজারবাইজানে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। প্রধান উপদেষ্টা বাকুতে বি?ভিন্ন দে?শের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান?দের স?ঙ্গে বৈঠক এবং সৌজন?্য সাক্ষাৎ করবেন।
কনফারেন্স অব দ্য পার্টিসের সংক্ষিপ্ত রূপ কপ। এটি বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিপর্যয় মোকাবিলায় জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। ১৯৯৫ সালে কপের প্রথম সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে বিশ্বকে বিপর্যয়ের হাত থেকে কতটা বাঁচানো যাবে। প্রধানত শিল্পোন্নত দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে তেল-গ্যাস-কয়লা পোড়ানোর ফলে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিকারক কার্বন পরিবেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। এতে বনে আগুন লাগছে, ঝড়-বন্যা হচ্ছে, অতি শীত-গরম হচ্ছে, বরফ গলে নিম্নাঞ্চল হুমকির মুখে ফেলছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ বাকুতে নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। আবার বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অবশ্যই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে কথা বলবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি তহবিল 'লস অ্যান্ড ড্যামেজ ফান্ড', প্যারিস চুক্তির তহবিল এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের কথা তুলে ধরা হবে। উন্নত দেশগুলো থেকে সবুজ প্রযুক্তিতে সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। ঋণ নয়, ক্ষতিপূরণ হিসেবে অর্থায়নের দাবি করবে বাংলাদেশ। প্যারিস চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল জোরালো ভূমিকা পালন করবে। প্যারিস চুক্তির আওতায় ২০২০ সাল থেকে প্রতিবছর ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল তা দ্রম্নত বাস্তবায়নের দাবি করা হবে। লস এন্ড ড্যামেজে অর্থায়নের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো, অভিযোজন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার জন্য এবং ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অধিকতর অর্থায়ন ও অভিযোজন তহবিলের বরাদ্দ বাড়ানো কথা বলা হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়নশীল দেশসমূহে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ধনী ও শিল্পোন্নত দেশসমূহ কর্তৃক অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করার পাশাপাশি অভিযোজন ও প্রশমন খাতে অর্থায়নের মধ্যে ৫০:৫০ সমতা আনার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখা হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিলে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ অন্তত দ্বিগুণ করার আহ্বান জানানো হবে।