রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

দুই পরিবারের দখলে মেঘনা ব্যাংক

১৩ উদ্যোক্তা পরিচালকের বিদায়
এম সাইফুল
  ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
দুই পরিবারের দখলে মেঘনা ব্যাংক
দুই পরিবারের দখলে মেঘনা ব্যাংক

বিদায়ী সরকারের আমলে ক্ষমতার অপব্যবহারে দুই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত মেঘনা ব্যাংক। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে একে একে সরে দাঁড়ান ১৩ উদ্যোক্তা পরিচালক। বর্তমানে ৬ উদ্যোক্তা পরিচালক থাকলেও ব্যাংকটির মূল নিয়ন্ত্রণ রয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী (জাবেদ) এবং সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশেকুর রহমানের পরিবারের হাতে।

এই দুই পরিবারের স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ ব্যাংকটির বর্তমান পরিচালকমন্ডলীর অনেকেই। তবে কৌশলগত কারণে মুখ খুলছেন না তারা। চতুর্থ প্রজন্মের মেঘনা ব্যাংক ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি সাবেক এমপি এইচ এন আশেকুর রহমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ তিনি ক্ষমতার বলয়ে থেকে এককভাবে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন। এ সময় ব্যাংক পরিচালনায় তার সীমাহীন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ করার কারণে অনেক উদ্যোক্তা পরিচালক তোপের মুখে পড়েন। এ অবস্থায় অনেককেই তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে বের করে দিয়েছেন, আবার অনেকেই শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

পরবর্তীতে এ উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার তৎকালীন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার পরিবার ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানরা কিনে নিয়েছেন। এতে দেখা যায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পরিবার, ও তার আত্মীয়স্বজন এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ৬ জন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকের শেয়ার ২ শতাংশের নিচে। যেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার নীতিমালার পরিপন্থি। এদিকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুই পরিবার ইতোমধ্যে ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা নামে-বেনামে ঋণ দিয়ে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া আওয়ামীপন্থি

চেয়ারম্যান ও তার ছেলে রাশেক রহমানের যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে, যা বর্তমানে খেলাপি পর্যায়ে। এভাবে পুরো ব্যাংকটি দুই পরিবারের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় অন্যান্য পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডাররা কোনঠাসা হয়ে পড়ে মালিকানা ছাড়তে বাধ্য হন। তাদের মধ্যে আছেন- কামাল উদ্দিন, আবদুল আলিম খান সেলিম, সাখাওয়াত হোসেন, অলোক দাস, আবদুল মালেক, নজরুল ইসলাম, ইয়াসীন আলী, আশিকুর রহমান লস্কর, সাইদুর রহমান, ফারা আহসান, মজিবুর রহমান, আলি আজিম খান এবং লোকমান হাকিম।

অনুপস্থিত পরিচালকরা হচ্ছে- ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ এন আশেকুর রহমান, চেয়ারম্যানের মেয়ে ইসমাম রাইদা রহমান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের কাজিন ডা. জোনায়েদ শফিক, ইসি কমিটির চেয়ারম্যান জাবেদ কায়সার আলী, যিনি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের বন্ধু, আদনান ইমামের ছোট বোন ড. জাহারা রসুল, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের আত্মীয় তারানা আহমেদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মেটকানেক্ট ম্যানেজমেন্ট লি.-এর প্রতিনিধি আবু হায়দার চৌধুরী ও নুরান ফাতেমা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের স্ত্রীর (ইতোমধ্যে তাদের) ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

মেঘনা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের পাঁচ পরিচালক রয়েছেন। যে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ এন আশেকুর রহমান ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পরিবার সদস্যদের পরিচালনা পর্ষদ থেকে অপসারণ করে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা জরুরি। প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও যাবতীয় সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মেঘনা ব্যাংকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছে বলে জানানো হয়।

ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বলেন, ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আশেকুর রহমান একটি গাড়ি বরাদ্দ পান, সে হিসেবে তাকে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রাডো জিপ গাড়ি ক্রয় করে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি প্রভাব খাটিয়ে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন না নিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি ক্রয় করেন, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী করতে পারেন না। গত জুন মাস হতে তিনি আমেরিকাতে অবস্থান করায় গাড়ি দুটি অলস পড়ে আছে। এতে ব্যাংক আর্থিকভাবে বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পর্যায়ে ব্যাংক থেকে আশেকুর রহমান ও তার সহযোগী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণ দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে