শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিমানবন্দরের জমি দখল করে সামিটের কনটেইনার ডিপো

সন্‌জীব নাথ, চট্টগ্রাম
  ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিমানবন্দরের জমি দখল করে সামিটের কনটেইনার ডিপো
বিমানবন্দরের জমি দখল করে সামিটের কনটেইনার ডিপো

চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের ৬০০ কোটি টাকা মূল্যমানের ১২ একর জমি দখল করে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ করেছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড (এসএপিএল)। পরে টার্মিনালের মূল স্থাপনার বাইরে টিনের বেড়া দিয়ে ভূমি দখল আরও বিস্তৃত করে। প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় গত ১৫ বছরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এসএপিএল'র বেদখলকৃত এ জমি উদ্ধার করতে পারেনি। তবে ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। তারা এসএপিএল'র দখলকৃত জায়গাটি পুনরুদ্ধারে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছে।

জানা গেছে, এসএপিএল'র অবৈধভাবে দখলে রাখা চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা থানার নাজিরপাড়ার (চড়ি হলদা) এ জায়গাটি ছেড়ে দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে কয়েক দফা নোটিশ দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এমনকি উচ্ছেদের জন্য সেখানে ম্যাজিস্ট্রেটও পাঠিয়েছিল সংস্থাটি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ম্যাজিস্ট্রেট বেদখলদারদের উচ্ছেদ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তথ্যমতে, ২০০৭ সালে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড দখল করা জমিতে কনটেইনার ডিপো স্থাপন করে। সে সময় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও ক্ষমতার প্রভাবে এসএপিএল কর্তৃপক্ষ কনটেইনার টার্মিনাল করে। বিমানবন্দরের দখল করা জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই বেবিচকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডকে একটি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে সাত দিনের মধ্যে সেখানে নির্মিত স্থাপনা অপসারণের জন্য বলা হয়। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আহাম্মেদ জামিল নোটিশটি স্বাক্ষর করেন। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের পক্ষে নোটিশ গ্রহণ করেন

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (অপারেশন) ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড অবৈধ দখলদার নয়। প্রতিষ্ঠানের কেনা সম্পত্তির ওপর কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড বিমানবন্দরের কোনো জায়গা দখল করেনি। অবৈধ দখলদার হিসেবে বেবিচক থেকে দেওয়া নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে।'

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য বলছে, ১৯৯২ সালে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন টার্মিনাল ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য পতেঙ্গা থানার দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় সাগরপাড়ে ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তরা অধিগ্রহণকৃত জায়গায় পুনর্বাসিত হতে অনীহা প্রকাশ করলে পরে তাদের জন্য আবার বিমানবন্দরসংলগ্ন বিজয়নগর এলাকায় জায়গা অধিগ্রহণ করা হয় এবং সেখানেই তাদের পুনর্বাসন করা হয়। অন্যদিকে আগে ক্রয় করা ২৭ দশমিক ৮১৫ একর জায়গায় বিমানবন্দরের নতুন আবাসিক কলোনি নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানের অভাবে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেড সেখান থেকে ১২ একর জায়গা দখল করে নেয়। বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিমানবন্দর ব্যবস্থাপকরা জমিটি উদ্ধারে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তারা এ জমি উদ্ধার করতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়েও এই জায়গা উদ্ধার করতে পারেননি।

শাহ আমানত বিমানবন্দরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ পতেঙ্গা মৌজায় সাগরপাড়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ২৭ একরের বেশি জায়গা রয়েছে। এর মধ্যে ১২ একর সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের দখলে, বাকি জায়গাগুলোর বেশিরভাগ আরও একাধিক ব্যক্তি ও গ্রম্নপের দখলে চলে গেছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রম্নপ ক্যাপ্টেন শেখ মোহাম্মদ আব্দুলস্নাহ আলমগীর বলেন, 'আমি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নতুন পরিচালক হিসেবে বদলি হয়ে এসেছি। শুনেছি, বিমানবন্দরের বেশ কিছু জায়গা বেদখল রয়েছে। কোনো সরকারি জায়গা বেদখল হয়ে থাকলে তা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

প্রসঙ্গত, এসএপিএল প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সদ্য সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের ভাই। পারিবারিক এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আজিজ খান হলেও ফারুক খানও প্রতিষ্ঠানটির একজন পরিচালক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে