পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের শাসনামলে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড এবং জুলাই-আগস্টের গণবিপস্নবে হতাহতের ঘটনার বিচার নিশ্চিতে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে বিএনপিতে। এ লক্ষ্যে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে গত ২৪ নভেম্বর জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর পৃথক দু'টি চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে দ্রম্নততার সঙ্গে এ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য-প্রমাণাদি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে ক্রসফায়ারে হত্যা সম্পর্কিত মামলা রুজু প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, 'স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দুঃশাসন আমলে আপনার জেলা, ইউনিট ও মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার তালিকা বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। প্রতিটি ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করার বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মামলা করা হচ্ছে। যে সব জেলা/মহানগর এলাকায় এখন পর্যন্ত ক্রসফায়ারের নামে হত্যা
করার বিষয়ে মামলা করা হয়নি- চিঠিতে সেখানকার তথ্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।
অন্য চিঠিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দলের হত্যা ও আহতদের পক্ষে মামলা রুজু প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে জুলাই ২০২৪ থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত আপনার জেলা, ইউনিট ও মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নৃশংসভাবে হত্যা ও আহত করা হয়েছে। প্রতিটি হত্যা ও আহতদের বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মামলা করা হচ্ছে। যে সব জেলা/মহানগর এলাকায় এখন পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও আহতের বিষয়ে মামলা করা হয়নি- সেখানকার তথ্য দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে চিঠিতে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করছেন দলের মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন খান পিপিএম।
বিএনপির তথ্যমতে, গত ১৬ বছরে দেড় লাখ মামলায় বিএনপির ৬০ লাখের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। দলের তরফ থেকে এসব মামলা প্রত্যাহারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য বিএনপি বেশ সক্রিয় অবস্থানে আছে। এ দাবিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দলটির নেতারা সোচ্চার রয়েছেন। সরকার আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানা গেছে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া এসব মামলার ব্যাপারেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে গত ২ সেপ্টেম্বর দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে সারা দেশের জেলা ও মহানগর সভাপতি/আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক/সদস্য-সচিব বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দল এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রাজনৈতিক মামলার বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়। এই কার্যক্রম শেষে রাজনৈতিক মামলার পুরো বিবরণ তারা সরকারের হাতে তুলে দিবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরের তথ্যমতে, গত জুলাই-আগস্টের গণ-অভু্যত্থানে ৮৩৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ৪২২ জন। এই গণবিপস্নবে মোট ৫ হাজারের অধিক লোক জখম হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২ হাজার ২৬ জন রয়েছে। এ ঘটনায় দলের পক্ষ থেকে সারা দেশে এ পর্যন্ত ১৫২টি মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০০৭ সাল থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিচারবহির্ভূতভাবে ১ হাজার ২৭৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী রয়েছেন ৮১৩ জন।
এ ঘটনায় গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেসব মামলায় কুমিলস্নার সাবেক এসপি তানভীর, চাপাইনবাবগঞ্জের সাবেক এসপি মাহবুব, যশোরের সাবেক এসপি প্রলয় জোয়ার্দার, চট্টগ্রামের সাবেক এসপি মিনা, ঢাকার খিলগাঁওয়ে ছাত্রদল নেতা আমজাদ হোসেন হত্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজি কৃষ্ণপদ রায়সহ আটজন সাবেক এসপিকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আসামি হিসেবে তৎকালীন এসপি থেকে শুরু করে পুলিশের কনস্টেবল পর্যন্ত রয়েছে।
বিএনপির অভিযোগ, পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এসব কর্মকর্তার নির্দেশে তখন দল ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের 'ক্রসফায়ারের নামে হত্যা' করা হয়। তাই এসব অপরাধীর বিচার নিশ্চিতে মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অনুকূল পরিবেশ না থাকায় ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী সরকারের সময় এসব মামলা করা সম্ভব হয়নি।