ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চূড়ান্ত হওয়ার পর বাদ পড়া ও ভোটারযোগ্যদের তালিকাভুক্ত করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সব কাজ শেষে আগামী বছরের ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও পরিকল্পনা নিয়েছে কমিশন।
সোমবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন ইসির প্রথম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় ঢাকার চার নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবদুর রহমানেল মাসুদ, তহমিদা আহমদ ও আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহ।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বছর হালনাগাদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে। পহেলা জানুয়ারি যারা ভোটারযোগ্য হবে সে সব তথ্য সংগ্রহ করে ২ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ হবে। দাবি, আপত্তি ও নিষ্পত্তি শেষে মার্চের ২ তারিখ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ
করা হবে। বাদ পড়া ভোটার ও ভোটারযোগ্যদের তালিকাভুক্ত করতে এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে নির্বাচন কমিশন।'
সানাউলস্নাহ বলেন, 'বাদ পড়া ভোটারদের বাইরে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটারযোগ্য হবেন (১৮ বছর), তাদের তথ্যও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা হবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় মৃত ভোটারদের বাদ, সংশোধন ও দ্বৈততা থাকলে তা কাটিয়ে উঠতে পারব।'
জানা যায়, সবশেষ চলতি বছরের ২ মার্চ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে ১২ কোটি ১৮ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন। আগামী জানুয়ারিতে নতুন ভোটার যুক্ত হবেন প্রায় ১৭ লাখ। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি যারা ভোটারযোগ্য হবেন, এ বছরের হালনাগাদের সময় তারা যুক্ত হবেন।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার সানাউলস্নাহ বলেন, 'এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আনুমানিক ছয় মাস সময় লাগবে। এর সঙ্গে হালনাগাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা চলমান প্রক্রিয়া। কেউ যেন বাদ না পড়ে।'
কবে, কখন, কীভাবে ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে, ইসি সচিবালয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন কমিশনার।
সানাউলস্নাহ বলেন, 'আমাদের হাতে হালনাগাদ ভোটার তালিকা থাকবে। এরপর আমরা আবার বাড়ি বাড়ি যাব, এজন্যে- ধারণা করছি ২৫ থেকে ২৭ লাখ বা তার কমবেশি ভোটার যারা অফিসে এসে নিবন্ধিত হননি, তাদের যুক্ত করার জন্যই বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত। যেহেতু বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি, সেক্ষেত্রে ২০২৫ সালের তথ্যও আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিয়ে নেবো। এটায় পহেলা জানুয়ারি ২০২৬ যারা ভোটারযোগ্য হবে তাদেরও নেওয়া হবে। আমরা লজিস্টিকস ডেপস্নয় করছি।'
২ মার্চ থেকে শুরু করে আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলবে বলেও জানান নির্বাচন কমিশনার।
এদিকে, সভায় নির্বাচন কমিশনের চার কমিশনারকে প্রধান করে চারটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা, নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটির প্রধান করা হয়েছে আবুল ফজল মো. সানাউলস্নাহকে। আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটির দায়িত্ব আবদুর রহমান মাসুদকে দেওয়া হয়।
সীমানা পুনর্র্নির্ধারণ, জাতীয়-স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রস্তুতি ভোট কেন্দ্র স্থাপন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও তদারকি কমিটির প্রধান হয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
আর নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার এবং পুনর্বিন্যাস ও দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত কমিটির প্রধান বেগম তহমিদা আহমদকে করা হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গঠিত কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে। এরপর নতুন কমিশন গঠনে আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত তালিকা থেকে পাঁচজনকে বেছে নিয়ে গত ২১ নভেম্বর নতুন এই কমিশন গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
২৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জাজেজ লাউঞ্জে নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।