মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বয়স নির্ধারণ করা সাড়ে ১২ বছরের কম বয়সী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ২ হাজার ১১১ জন। এ বিষয়ে মামলার সিদ্ধান্ত পেলে তাদের সনদ বাতিল হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক।
শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান বিজয় দিবস এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের নিয়ে বুধবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ বছর ৬ মাস। এর নিচে যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের জেলা ভিত্তিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই সংখ্যা ২ হাজার ১১১ জন। এ বিষয়ে কটি মামলা আপিল বিভাগে আছে। হয়তো জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একটা সিদ্ধান্ত পাবো। আদালতের সিদ্ধান্ত পেলে আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বাতিল করবো।
ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া অনেক বড় অপরাধ। আদালতের কাছ থেকে যখন এ বিষয়টি নির্ণয় হবে তখন তাদের সনদ বাতিল এবং সাজার ব্যবস্থা করব। একই সঙ্গে এসব অমুক্তিযোদ্ধাদের নাম প্রত্যাহারের সুযোগ দিয়ে সাধারণ ক্ষমার চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এক প্রশ্নে ফারুক ই আজম বলেন, বহু অভিযোগ আছে, মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে, গেজেটভুক্ত হয়েছে এবং সুবিধাদি গ্রহণ করছে। আমার দৃষ্টিতে এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। এটা ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ। আদালতের কাছ থেকে যখন এ বিষয়টি নির্ণয় হবে তখন তাদের তো বাতিল (সনদ) করবই এবং সাজার ব্যবস্থাও করব, যেন এটার জন্য প্রয়োজনীয় শাস্তি ভোগ করে।
একইভাবে অন্য যেসব অমুক্তিযোদ্ধা এখানে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হয়েছেন, আমরা যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সুনির্দিষ্ট করতে পারলে তাদের ব্যাপারে একই রকমের বিষয় হবে।
উপদেষ্টা বলেন, এটার শাস্তি পাওয়া উচিত, তাদের সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। আমরা আশা করছি, এ বিষয়ে খুব দ্রম্নত কার্যকর ব্যবস্থায় যেতে পারব।
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের হাতে ৩-৪টা তালিকা আছে, বহু রকমের নীল তালিকা, লাল তালিকা, নানা রকমের তালিকা, ভারতীয় তালিকা। বিভিন্ন রকমের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা এখানে আছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, অনুরাগের বশে কিংবা কারো আত্মীয়তার বশে কিংবা অন্য কোনো এখানে বহু মানুষকে মুক্তিযোদ্ধা করা হয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে একটু সময় তো লাগবে। কারণ, আমরা চাই না, যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা, তাদের মর্যাদা যেন ক্ষুণ্ন না হয়। সেটাকে অক্ষুণ্ন রেখেই বাকি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এটা আমাদের জন্য একটা দুরূহ কাজ। আমরা প্রচেষ্টা রাখছি। এ ক্ষেত্রেও সফলতা আসবে। '
উপদেষ্টা বলেন, আমরা একটা ইনডেমনিটিও (সাধারণ ক্ষমা) হয়তো দেব। যারা অমুক্তিযোদ্ধা এভাবে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আসছেন, তারা যেন স্বেচ্ছায় এখান থেকে চলে যান। যদি চলে যান, তাহলে হয়তো তারা সাধারণ ক্ষমাও পেতে পারেন। আর যদি সেটা না হয়, আমরা যেটা বলেছি যে, এই প্রতারণায় দায়ে আমরা তাদের অভিযুক্ত করব।