বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ

বিশেষ প্রতিনিধি
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
শনিবার রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ভরে ওঠে হ আরও ছবি পৃষ্ঠা-১৬ -নাজমুল ইসলাম

শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় জাতি স্মরণ করেছে তার অমর শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। শনিবার সকালে মিরপুর বধ্যভূমি ও রায়েরবাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও রাজধানীর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। এ সময় সবার হাতে ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার নিয়ে শ্রদ্ধা জানান শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।

এর আগে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সকাল ৭টা ৫ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি, পরে প্রধান উপদেষ্টা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। এ সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করে সশস্ত্র বাহিনীর বাহিনীর একটি চৌকস দল। প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা নিবেদনের পর উপদেষ্টামন্ডলী, শীর্ষ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

১৯৭১ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয়ের মাত্র দু'দিন আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা পরিকল্পিতভাবে দেশের কৃতী সন্তানদের হত্যা করে। তারপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভোর থেকে রাজধানীর রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধ্যাপক, সাংবাদিক,

চিকিৎসক, শিল্পী, প্রকৌশলী ও লেখকসহ এ দেশের দুই শতাধিক কৃতী সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের জঘন্যতম প্রতিশোধ নেয়। স্বাধীনতাবিরোধীরা তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, 'তরুণদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাষ্ট্র গঠনের যে দ্বিতীয় সুযোগ আমরা পেয়েছি, সেই সুযোগ যেন আমরা কোনোভাবেই নষ্ট না করি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এটাই আমাদের কাম্য।'

শ্রদ্ধা জানানো শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, 'শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আজকের এইদিনে জাতির সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। এ দিবসগুলো আমাদের মূল পরিচয়ের স্মারক। আমরা এ সূর্যসন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন সবস্তরের মানুষ। দিবসটিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন। জাতির শ্রদ্ধার অর্ঘ্যে আর ভালোবাসায় সিক্ত হলেন শহীদ বুদ্ধিজীবীরা।

দিনের প্রথম প্রহরে দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে জড়ো হন রাজনৈতিক দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সকালে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী বধ্যভূমিতে একাত্তরের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার শাহাদাত হোসেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে খুলনার গলস্নামারি স্মৃতিসৌধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন শ্রেণির-পেশার মানুষ।

ময়মনসিংহের থানারঘাট বধ্যভূমিতে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভাগীয় কমিশনার, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। মুন্সীগঞ্জ সরকারি হরগঙ্গা কলেজে স্মৃতি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। গাজীপুরে বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আলোচনা সভা হয়। সিলেটে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জামালপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, পঞ্চগড়, হিলি, মেহেরপুর, লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রংপুরে বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, নানা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন। শরীয়তপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আলোচনা সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় ছিলেন পুলিশ সুপার নজরুল ইসলামসহ জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা। যশোরে চাঁচড়া বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানায় জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে