রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

হাসান আরিফের মৃতু্যতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক

বিশেষ প্রতিনিধি
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
হাসান আরিফের মৃতু্যতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক
হাসান আরিফের মৃতু্যতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক

বেসামরিক বিমান, পর্যটন ও ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের মৃতু্যতে রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পরিষদের এক বিশেষ সভায় এ শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সভায় শোক প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

সভায় রিজওয়ানা হাসান জানান, আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমানের কবরের পাশে হাসান আরিফকে সমাহিত করা হবে।

সভার শুরুতে উপদেষ্টা হাসান আরিফের মৃতু্যতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্য উপদেষ্টারা হাসান আরিফের স্মৃতিচারণা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আজ ছোট ছোট অনেক কথাই মনে পড়ছে। তিনি সব সময় আমাকে মনে করিয়ে দিতেন, আমরা কিন্তু সমবয়সী। শিশুর মতো সরল ব্যবহার ছিল তাঁর। যত রকম সমস্যা দেখা দিয়েছে, যেখানে কোনো কোন্দল দেখেছেন, তিনি হাজির হয়েছেন তার সমাধানে। এ এক অপূর্ব লোক, আমাদের মাঝ থেকে চলে গেলেন।'

অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, হাসান আরিফ ছিলেন একজন বিরল ব্যক্তিত্ব ও সদা হাস্যময়।

অতীতের কর্মময় জীবনের স্মৃতিচারণা করে পাট, বস্ত্র ও নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'ব্যক্তিগতভাবে হাসান আরিফের মৃতু্যতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।'

সমাজকল্যাণ এবং নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ বলেন, এখানে কাজ করতে এসে উনার সঙ্গে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। উনি আমাদের জন্য ছিলেন এক ইতিবাচক প্রেরণা।

মৎস্য ও পশু সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, 'আজকে আমাদের উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আমরা হাসান আরিফকে মিস করছি। উনাকে ছাড়া আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।'

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান আইনজীবী হিসেবে হাসান আরিফের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, উনি ছিলেন মানবাধিকার রক্ষায় সব সময় সোচ্চার। আদিলুর রহমান জানান, মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি হিসেবেও কাজ করেছেন হাসান আরিফ।

আইন ও বিচার এবং প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, হাসান আরিফ ছিলেন একজন কর্মনিষ্ঠ ও পরিশ্রমী মানুষ। সব নথি তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, হাসান আরিফ কখনো কোনো কাজ কম গুরুত্বের সঙ্গে নিতেন না।

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, হাসান আরিফ ছিলেন অমায়িক এক মানুষ। যেকোনো সমস্যা উনার সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করা যেত।

জ্বালানি ও সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'আমাদের সমাজে বিভেদ অনেক বেশি। এ বিভেদ জোড়া লাগানোর মানুষ আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। সর্বমহলে উনার গ্রহণযোগ্যতা ছিল।'

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় হাসান আরিফের ভূমিকা স্মরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, উনি পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের নিয়ে অনেক ভাবতেন। তাঁর মৃতু্যতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হলো পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের।

স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, 'উপদেষ্টা পরিষদে এসে হাসান আরিফকে চিনেছি, উনাকে সব সময় শিক্ষকের মতো পাশে পেয়েছি।'

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, 'উনার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একবারও আমাদের বয়সের পার্থক্য বুঝতে পারিনি। তিনি সবার সঙ্গে আন্তরিকভাবে মিশতেন।'

খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, '২০০৮ সালে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন আয়োজনে আন্তরিকভাবে কাজ করতে দেখেছি উনাকে। এবারও উনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন।'

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ, বেসামরিক বিমান সচিব নাসরীন জাহান, ভূমিসচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ।

শুক্রবার দুপুরে বাসায় খেতে বসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৮৩ বছর বয়সী হাসান আরিফ। পরিবারের সদস্যরা তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওইদিন বাদ এশা ধানমন্ডি সাত নম্বর বায়তুল আমান মসজিদে তার জানাজা হয়। এরপর শনিবার বেলা ১১টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং সচিবালয় তার আরো দুই দফা জানাজা হয়।

গণঅভু্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ অগাস্ট শপথ নেয় মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শুরুতে স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও হাসান আরিফের ওপর দেওয়া হয়েছিল। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে তিনি ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন।

১৯৪১ সালের ১০ জুলাই কলকাতায় হাসান আরিফের জন্ম। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং এলএলবি করেন। ১৯৬৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তিনি সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

বিএনপি জামায়াত-জোট সরকারের সময়ে ২০০১ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছিলেন হাসান আরিফ। ২০০৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে