রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
ডলারের দাম বাড়ায় সর্বনাশ

নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়ছে অস্বস্তি

হঠাৎ করে ডলারের দাম চড়তে শুরু করায় নিত্যপণ্যের বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠেছে। অর্থনীতিবিদ ও বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম আরো বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি হবে
সাখাওয়াত হোসেন
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নিত্যপণ্যের বাজারে বাড়ছে অস্বস্তি

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তার সিংহভাগই বাস্তবায়িত না হওয়ায় নিত্যপণ্যের পাগলা ঘোড়া আগের মতোই উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছে। এতে হতদরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ মহাবিপাকে পড়েছে। কম দামে নিত্যপণ্য কেনার জন্য টিসিবির ট্রাক সেলের লাইন প্রতিদিনই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। গরিব ও নিম্নবিত্ত মানুষের সঙ্গে নিম্ন-মধ্যবিত্তের ভিড় আরও বেড়েছে। এর উপর হঠাৎ করে ডলারের দাম চড়তে শুরু করায় নিত্যপণ্যের বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে। ফলে মূল্যস্ফীতি হবে। এ সুযোগে বাজার সিন্ডিকেট দেশীয় পণ্যের দামও বাড়িয়ে দেবে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমবে; দারিদ্র্য বাড়বে। বাজার ব্যবস্থাপনার মান বাড়ানো না গেলে শুধু শুল্ক ছাড় দিয়ে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলেও মনে করেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নিম্ন আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল, আলু, ডিম, পেঁয়াজ, তেল, চিনি, খেজুর আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়ের ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারাবে। অথচ শুল্ক ছাড়ের কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। দাম কমা তো দূরের কথা উল্টো এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। কোনোটা দাম বাড়ার পর স্থিতিশীল রয়েছে। অথচ বাজার সিন্ডিকেটের চিরচেনা মাফিয়া চক্র শুল্ক ছাড়ের ফায়দা লুটছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে বছরে এক কোটি মানুষের মাঝে নিত্যপণ্য সরবরাহ করেছে। এজন্য সংস্থাটিকে ৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। টিসিবি এক লিটার সয়াবিন তেল ১০০ টাকায় এবং মসুর ডাল কেজিপ্রতি ৬০ টাকা বিক্রি করছে। পক্ষান্তরে সয়াবিন তেল আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলেও ১৬৭-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই ৭ পণ্যে শুল্ক ছাড় না দিলে সেই অর্থ দিয়ে আরও এক কোটি পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে ৮ মাস পণ্য সরবরাহ করতে পারত টিসিবি।

এনবিআরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দুই দফায় চালের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। প্রথম দফায় ২০ অক্টোবর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ এবং রেগুলেটরি ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ৩১ অক্টোবর শুধু ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বহাল রেখে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। সবমিলিয়ে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। তখন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এনবিআর বলেছিল, শুল্ক কমানোয় প্রতি কেজি চালের আমদানি ব্যয় ২৫ দশমিক ৪৪ টাকা কমবে। এতে চালের আমদানি ও বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। চালের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। অথচ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম কমেনি, উল্টো এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের নীতি-নির্ধারকরাও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকার করেছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নতুন সরকারের কাছে ভোক্তার প্রথম চাওয়া পণ্যের দাম কমানো। সরকার সে লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছে। সরবরাহ বাড়াতে একাধিক পণ্যের শুল্ক ছাড় দিয়েছে। তদারকিও করা হচ্ছে। তারপরও পণ্যের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি সরকারের হার্ডলাইনে যাওয়া ছাড়া কোনো গত্যান্তর নেই।

এদিকে বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরবরাহ বাড়ানো জরুরি। শুল্ক কমানো হলো; কিন্তু আমদানি বাড়ল না, তাতে সুফল পাওয়া যাবে না। চাল, পেঁয়াজ, আলু ও ডিমের বাজারে শুল্ক কমানোর ইতিবাচক প্রভাব না পড়ার বড় কারণ আমদানি বৃদ্ধি না পাওয়া।

এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাবেক সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, 'কর কমানো একটি উপায় হলেও বেশিরভাগ সময় তা সুফল দেয় না। আমি মনে করি, নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা ও এই ব্যাপারে বিঘ্ন সৃষ্টিকারীদের যত দূর সম্ভব নিয়ন্ত্রণে আনাটা জরুরি। চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'একদল চাঁদাবাজি করে চলে গেছে, আরেক দল চাঁদাবাজি করার দায়িত্বে এসেছে- এটাকে যদি সরকার স্বাভাবিকভাবে নেয়, তাহলে আমার বলার কিছু নেই।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস) নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির যে চিত্র তুলে ধরেছে, তাতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার ১৪ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এটি গত সাড়ে ১৩ বছরের মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বাড়ার পাশাপাশি সার্বিক মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে উঠেছে।

অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি বাজারে একেক সময় একেকটি পণ্যের ঘাটতি তৈরি হওয়াও ভোক্তাদের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক দিনে বেশি দাম দিয়েও বোতলজাত ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। এর পেছনে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে। অথচ এ চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি; যা তাদের আগামীতে আরও বেপরোয়া করে তুলতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ে অর্থনীতিবিদ সেলিম রায়হান যা বলেছেন, তা আরও বিপজ্জনক। তার মতে, 'বিবিএস যে পদ্ধতিতে মূল্যস্ফীতি গণনা করে, তাতে গরিব মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপ কতটা অনুভব করেন, তা ঠিকমতো উঠে আসে না। জাতীয় গড় হিসাবে মূল্যস্ফীতির হিসাব আসে। একটি পরিবারকে গড়ে তাদের আয়ের ৪৮ শতাংশ অর্থই খাবার কেনার পেছনে খরচ করতে হয়। আর খাবার কিনতে গরিব পরিবারকে আয়ের দুই-তৃতীয়াংশের মতো অর্থ খরচ করতে হয়।'

বিবিএসের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে বেশি। নভেম্বর মাসের হিসাবে, শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে। আর গ্রামে এই হার ১৩ দশমিক ৪১। গ্রামের ভোক্তারা অনেক কিছু নিজে উৎপাদন করেন বলে সেখানে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কম। শহরে মানুষকে সব পণ্য কিনে খেতে হয়। তবে আয়ের বিষয়টি আমলে নিলে তাদের ওপরও চাপ কম পড়ে না।

কঠিন বাস্তবতা হলো, ভোগ্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়লেও মানুষের আয় বাড়ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতিতেও স্থবিরতা চলছে। পণ্য আমদানিও কমছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ভোক্তাদের চাহিদার চেয়ে কম খাবার কিনে খেতে হচ্ছে অথবা সংসারের অন্যান্য খাতের ব্যয় কমিয়ে খাবার কিনতে হচ্ছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে এত দিন সরকার রুটিনমাফিক তদারকি ও নজরদারি করে আসছিল, যা তেমন কাজে লাগেনি। ভোক্তা অধিকার দপ্তরের ঝটিকা তলস্নাশি অভিযান অনেকটা চোর-পুলিশ খেলায় রূপ নিয়েছে। ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে চাঁদাবাজিও আগের মতো রয়ে গেছে। যা খোদ ঢাকা মহানগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাও নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন।

গত শনিবার এক মতবিনিময় সভায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, চাঁদাবাজির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে। চাঁদাবাজি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ঢাকা শহরে চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, দুই-তিন দিনের মধ্যেই তালিকা ধরে অভিযান শুরু হবে।

তবে শুধুমাত্র চাঁদাবাজদের দমন করে দ্রব্যমূল্য কতটা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে তা নিয়ে বাজার পর্যবেক্ষকরা অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, 'মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হলে সর্বপ্রথম বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। বৈধ-অবৈধ গুদামে যাতে কেউ নির্ধারিত সময়ের বেশি কোনো নিত্যপণ্য মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে তা তদারকিও জরুরি। আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের ঋণপত্র খোলার জন্য ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। চাল-ডাল-তেল ও চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের চাহিদা ও মজুতের সঠিক থাকাও জরুরি। এছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের যে ৮টি সংস্থার উপর বাজার তদারকির দায়িত্ব তারা নিয়মিত পালন করছে কিনা তা মনিটরিংয়ে সরকারকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।'

এদিকে বাজার ব্যবস্থাপনার মান বাড়ানো না গেলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কষাঘাতে দেশের মানুষের আরও একটি বড় অংশ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের ভাষ্য, 'দেশে এমনতিই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা উদ্বেগজনক। এ সংখ্যা আরও বাড়লে শুধু বাজারই নয়, গোটা দেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।'

চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন বা ২৬ শতাংশ মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ওই প্রতিবেদনে ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এজন্য অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণগুলোকে দায়ী করেছে। এর মধ্যে একটি কারণ হলো আমদানি কমে যাওয়া। এছাড়া অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর মধ্যে আছে বন্যার কারণে ফসলের ক্ষতি, এ সময়ে সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। এছাড়া বাজার সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

সম্প্রতি ব্রয়লার মুরগি ও চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা নানা যুক্তি দেখালেও বাজার সংশ্লিষ্টরা এজন্য সিন্ডিকেটকেই দায়ি করেছেন। তাদের ভাষ্য, 'আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের চাল সিন্ডিকেটের তৎপরতা কিছুটা কমলেও নতুন করে আরও একাধিক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও পুরানো সিন্ডিকেট তাদের ঘাড়ে ভর করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরে চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। কোনো কোনো চালের দাম আবার ৫ টাকাও বেড়েছে। এর প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের সবখানেই চালের দাম লাগামহীনভাবে বাড়তে শুরু করেছে।

জানা গেছে, দিনাজপুরে এক সপ্তাহ আগে জিরাশাইল চালের দাম ছিল ৭৫ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। নাজিরশাইল আগে ছিল ৮০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। বিআর২৮ ও বিআর২৯ চাল এক সপ্তাহ আগে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। গুটি স্বর্ণ এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হচ্ছিল ৫০ টাকা কেজি দরে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকা কেজি দরে। সব ধরনের চাল ঢাকার বাজারে, ওই দামের সঙ্গে কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

রাজধানীর বাজারে তিন দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ১৮ ডিসেম্বর ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজিতে। আর সোনালি মুরগি মানভেদে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শীত মৌসুমে বিয়ে, বনভোজনের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় চাহিদার সঙ্গে পালস্না দিয়ে দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করলেও বাজার সংশ্লিষ্টরা অনেকেই এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তাদের ভাষ্য, 'বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে মুরগির দাম বেশি। তাই কিছু মুরগি অবৈধভাবে ভারতে যাচ্ছে। এছাড়া মুরগির দাম বৃদ্ধি নেপথ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে। দাম বাড়লেও কেজিপ্রতি ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ টাকা বাড়তে পারে। কিন্তু হঠাৎ করে ৩০-৪০ টাকা বেড়ে যাওয়া একেবারেই অযৌক্তিক। যারা অজুহাত পেলেই অস্বাভাবিক দাম বাড়িয়ে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।

এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য অদক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে একটি বাণিজ্য সংগঠন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) জানিয়েছে, পণ্য উৎপাদন খরচের ক্রমাগত উচ্চ মূল্য, অদক্ষ বাজার ব্যবস্থা, পণ্য পরিবহনের উচ্চ হার, বাজার আধিপত্য ও উৎপাদনকারীদের খুচরা বাজারে প্রবেশাধিকার স্বল্প সুযোগ ইত্যাদি কারণে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

এ বিষয়ে সংস্থাটির সুপারিশ- মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতা কমিয়ে ও অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে যেসব পণ্যের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই। ছাড়া স্থানীয় ও আমদানি করা খাদ্যপণ্যের নগদ মেমোর জন্য ট্র্যাকিং সিস্টেম বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি উৎপাদন খরচ কমাতে সার, তেল ও বিদু্যতে ভর্তুকি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, 'যে কোনো উদ্যোগের কার্যকারিতা নির্ভর করে তার ফলাফলের ওপর। অন্তর্বর্তী সরকার মূল্য নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও ফলাফলের নিরিখে এখনো বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়েনি।'

তার ভাষ্য- 'আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির চাপ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, বাজার শান্ত করতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।'

পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা ও সরবরাহে তথ্যগত ঘাটতি রয়েছে বলেও উলেস্নখ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে