মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
বর্ধিত সভায় ১০ প্রস্তাবনা

ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করে চলার প্রত্যয় বিএনপির

বিশেষ প্রতিনিধি
  ০১ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করে চলার প্রত্যয় বিএনপির
ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করে চলার প্রত্যয় বিএনপির

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বানসহ বিভিন্ন প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিএনপির বর্ধিত সভায়। একইসঙ্গে গণবিরোধী কর্মকান্ড ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকতে দলের নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি 'ঐক্যেই শক্তি-ঐক্যেই মুক্তি'-এই স্স্নোগান বাস্তবায়নের মাধ্যমে দলের সৎ ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করে বিজয়ের পথে এগিয়ে চলার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে।

শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় এমন নির্দেশনাসহ ১০ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সভায় মহান একুশে, উনসত্তরের গণ-অভু্যত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০ এর ছাত্র গণ-অভু্যত্থান ও স্বৈরাচার/ফ্যাসিবাদ বিরোধী দীর্ঘ ১৬ বছরের অবিরাম আন্দোলন এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভু্যত্থানের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। আহত, পঙ্গু, দৃষ্টিহীন ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রকৃত শহীদদের তালিকা প্রণয়ন, তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান, এসব পরিবারে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সুচিকিৎসা দেওয়ারও দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনির্বাচিত অবৈধ সরকার বিচারের নামে প্রহসন করে মিথ্যা অভিযোগে কারারুদ্ধ করবে তা নিশ্চিত জেনেও আপোসহীনভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সাহসী নেতৃত্ব দিয়ে কারারুদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। সরকারি ষড়যন্ত্রে ভুল চিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থ হয়েও বিএনপি এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নৈতিক শক্তি যুগিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মূল প্রেরণা হিসাবে ভূমিকা পালন করায় সবার প্রতি বর্ধিত সভায় গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে আরও বলা হয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য অবৈধ সরকার খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করার পর দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ, বিএনপি ও অঙ্গদল-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যখন দেশ, দল ও জনগণের আন্দোলন এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত তখন স্বৈরাচারী সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়ে অসুস্থ অবস্থায় প্রবাসে থাকতে বাধ্য হওয়া দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়। এমন কঠিন সময়ে দায়িত্ব নিয়ে তিনি দিন-রাত অবিশ্রান্ত পরিশ্রম করে দলকে সুসংহত করে আন্দোলনকে বেগবান করে তা অসম্ভবকে সম্ভব করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

তার নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অসংখ্য রাজনৈতিক দলের ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং ১ দফা দাবি আদায় করে ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা বাস্তবায়নের যুগপৎ আন্দোলন দেশের রাজনীতিতে এক নতুন ও সফল ধারার সূচনা করেছে। এই আন্দোলনের পথ ধরেই ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে হাজারো ছাত্র-শ্রমিক-জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে গণ-অভু্যত্থান সফল হয়, অবৈধ সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং ফ্যাসিবাদের পতন ঘটে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী এই গণ-অভু্যত্থানের ভিত্তি স্থাপন ও শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিজয়ী করার লড়াইয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কৌশলী, সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রশংসা অর্জন করেছে।

বর্ধিত সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, ২০১৫ সালে খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন ২০৩০ এবং যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনে গৃহীত ২০২৩ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘোষিত ৩১ দফা রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখার আলোকে রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব দল ও সংগঠনের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করা সময়ের দাবি। ঐক্যমত্যে গৃহীত যেসব সংস্কার প্রস্তাব নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন সম্ভব তা অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং যেসব সংস্কারের জন্য আইন কিংবা সংবিধান পরিবর্তন প্রয়োজন তা নির্বাচিত জাতীয় সংসদে অনুমোদনের লক্ষ্যে পেশ করার জন্য সভা প্রস্তাব করেছে।

বিএনপির সিদ্ধান্তের মধ্যে আরো রয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জনকল্যাণমূলক সব দৈনন্দিন কর্মকান্ডের সাফল্য নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা প্রয়োজন। এই সরকারের প্রধান দায়িত্ব, জনগণকে তাদের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া'র লক্ষ্যে সর্বাগ্রে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা সব গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক নাগরিকের দায়িত্ব।

সভায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অযৌক্তিক ঊর্ধ্বগতির এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমবর্ধমান অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দ্রম্নত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে গুম, খুন, গায়েবি মামলাসহ সীমাহীন গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল অবৈধ সরকার প্রধানসহ তার চিহ্নিত সহযোগীরা কীভাবে নির্বিঘ্নে দেশ থেকে বেরিয়ে গেলেন এবং এখনো অসংখ্য অপরাধী অবাধে বিচরণ করছে তার একটি সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা সরকারের কাছে দাবি করা হয়। একইসঙ্গে সভায় পতিত ফ্যাসিবাদী সরকার এবং তাদের সহযোগী ১/১১ সরকারের দায়ের করা সব মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দ্রম্নত প্রত্যাহারের জোর দাবি জানানো হয়।

বিএনপিকে জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সভা থেকে দলের এবং অঙ্গ দল ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে জনগণের মধ্যে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দলীয় নীতি, আদর্শ, কর্মসূচি বাস্তবায়নে অবহেলা এবং দুর্নীতি-অনাচারসহ গণবিরোধী সব কর্মকান্ড ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বিরত থাকার জন্যও সবাইকে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে