সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
অগ্নিঝরা মার্চ

ঢাবির সমাবেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন রাতে কারফিউ জারি

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
ঢাবির সমাবেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন রাতে কারফিউ জারি
ঢাবির সমাবেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন রাতে কারফিউ জারি

একাত্তর সালের মার্চ মাসের ২ তারিখে দেশে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ঐতিহাসিক বটতলায় অনুষ্ঠিত হয় বিশাল জনসভা। সভা শেষে ছাত্রনেতারা উত্তোলন করেন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত স্বাধীন বাংলার পতাকা। এছাড়া ফার্মগেট ও বায়তুল মোকাররমে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সকাল ১০টার পর ঢাবির বটতলার সভাস্থলে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব উপস্থিতি ছিল। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঢাবির কলাভবনের পশ্চিমে প্রবেশ পথের গাড়ি-বারান্দার ছাদে দাঁড়িয়ে ছাত্রনেতারা সভা পরিচালনা করেন। ছাত্রনেতা নুরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে জনসভায় ছাত্রলীগের সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ ও ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মাখন বক্তব্য রাখেন। পতাকা উত্তোলন করেন আ স ম আব্দুর রব। স্বাধীন বাংলাদেশের এই পতাকার পরিকল্পনা ও অঙ্কন করেন শিল্পী শিব নারায়ণ দাশ। সভা চলাকালে ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ এসে যোগ দেন।

এদিনের জনসভা এবং দেশের জনগণের প্রতিরোধের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে লেখক রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী তার 'একাত্তরের দশ মাস' গ্রন্থে উলেস্নখ করেছেন- 'দোকানের ঝাঁপ বন্ধ, কারখানার চিমনিতে ওঠেনি ধোঁয়া, স্তব্ধ কলের চাকা, কর্মচারীরা যোগ দেয়নি কাজে, অফিস-আদালত সর্বত্র স্তব্ধতা ছেয়ে রেখেছিল।'

'সংবাদ' ও 'আজাদ' পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, শেখ মুজিব তার বিবৃতিতে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের ঘোষণা দেন। এছাড়া ৩ মার্চকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবেও ঘোষণা করেন তিনি।

একাত্তরের এদিন সকালে অনুষ্ঠিত ঢাবির ঐতিহাসিক ওই জনসভায় ছাত্রনেতারা অসহযোগ আন্দোলন শুরু করা এবং শেখ মুজিবের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। সভার শুরুতে ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী সমবেত ছাত্রদের শেখ মুজিবের নেতৃত্ব ও নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার শপথ পাঠ করান। সভাশেষে ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে বিশাল এক প্রতিবাদ মিছিল স্বাধীনতার স্স্নোগান দিতে দিতে বায়তুল মোকাররমের দিকে চলে যায়।

জানা যায়, ন্যাপ (ওয়ালী), ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, কৃষক সমিতিসহ বহু সংগঠনের নেতাকর্মীরা হরতাল পালনের কর্মসূচিতে যোগ দেন। এদিকে পাকিস্তান সরকার ওইদিন রাতে হঠাৎ ঢাকায় কারফিউ জারির ঘোষণা দেয়। বেতার বার্তায় বলা হয়, সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে।

অন্যদিকে, বেতারে কারফিউ জারির ঘোষণা শুনে ছাত্র ও শ্রমিকরা রাতে রাস্তায় নেমে আসেন। তারা কারফিউ ভেঙে কারফিউয়ের বিরুদ্ধে স্স্নোগান তুলে বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। তাদের স্স্নোগান ছিল, 'সান্ধ্য আইন মানি না', 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর' ইত্যাদি। ছাত্র-জনতার সমবেত বিক্ষোভ মিছিল ও স্স্নোগানে কেঁপে ওঠে ঢাকা শহর।

'দৈনিক পাকিস্তান' পত্রিকার বরাত দিয়ে লেখক রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী তার গ্রন্থে উলেস্নখ করেন, 'ঢাকা শহরে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। জঙ্গি মিছিল আর স্বাধীনতার স্স্নোগানে ঢাকা শহর মুখরিত হয়ে ওঠে। বেলা ১১টার দিকে ফার্মগেটে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর সামরিক বাহিনীর গুলি বর্ষণ ও বেয়নেট চার্জে অন্তত ৯ ব্যক্তি হতাহত হয়।'

জানা যায়, এদিন ন্যাপের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে এবং জাতীয় লীগের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররমে দু'টি প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাপের সভায় মহীউদ্দিন আহমেদ, আব্দুল হালিম, মতিয়া চৌধুরী, সাইফুদ্দিন আহমদ মানিক, নুরুর রহমান ও নুরুল ইসলাম এবং জাতীয় লীগের সভায় আতাউর রহমান বক্তব্য দেন।

তথ্যসূত্র :একাত্তরের দশ মাস, রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী, গতিধারা ১৯৯৭, ঢাকা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে