আজ ৭ মার্চ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৯তম কারাবন্দি দিবস। ২০০৭ সালের বিভীষিকাময় সেই রাতে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই বিতর্কিত সেনা সমর্থিত সরকারের জরুরি বিধিমালায় গ্রেপ্তার করা হয় দেশের জনপ্রিয় এই রাজনীতিককে। প্রায় দেড় বছর কারাবাসের পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয় তাকে। এরপর প্রায় ১৭ বছর নির্বাসিত হয়ে প্রিয় জনগণ থেকে আছেন অনেক দূরে। তবে নির্বাসিত এই সময়ে নির্বাচন আন্দোলনসহ জনস্বার্থের সব আন্দোলনে নেতৃত্বে দিয়ে ক্যারিশমেটিক লিডার হিসেবে জনমনে মর্যাদাপূর্ণ স্থান করে নিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০০৭ সালের ১/১১-এর জরুরি অবস্থাকালীন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মূল টার্গেটে পরিণত হন তারেক রহমান। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছর এবং পরবর্তী ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দেড় দশকে রাষ্ট্রীয় সর্বশক্তি দিয়ে টাস্কফোর্স, এনবিআর, দুদকসহ সব সংস্থাই দেশে-বিদেশে অনুসন্ধান করেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদা দাবি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তাকে দন্ড দিতে জরুরি অবস্থাকালীন দ্রম্নত বিচার আইনে দফায় দফায় সংশোধনীও আনা হয়। আওয়ামী সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা ও সাজানো মামলায় ফরমায়েশি রায় দেওয়ার চেষ্টাও হয়েছে অনেকবার। তাকে সাজা না দেওয়ায় নিম্ন আদালতের এক বিচারককে দেশান্তরিত হতে হয়।
তারেক রহমানকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ রিমান্ড ও কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে নিষ্ঠুর নির্যাতনের কারণে দেড় দশকের বেশি সময় অত্যন্ত কষ্টে তার দিন কেটেছে। কেন্দ্রীয় কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে নির্মম নির্যাতনের পাশাপাশি ১৮ মাস কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের প্রভাবে আজও তাকে চিকিৎসার মধ্য দিয়েডেতে হচ্ছে।
তারেক রহমানের প্রতি এমন নির্মম নির্যাতনের কারণ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় নেপথ্যে থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তারেক রহমান। তার দূরদর্শিতা, অক্লান্ত পরিশ্রম, প্রজ্ঞা ও ক্যারিশমার কারণে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় ২০০১ সালের নির্বাচনে। দীর্ঘদিন দলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেপথ্যচারীর ভূমিকা পালন করলেও ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। দলের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। তারেক রহমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে গভীর সেতুবন্ধন নির্মাণ করতে তৃণমূল সম্মেলনের আয়োজন করেন। এসব সম্মেলনে কর্মীরা দলীয় রাজনীতি ও সংগঠন সম্পর্কে মন খুলে কথা বলেছেন। এর মধ্য দিয়ে একটি সুসংঘবদ্ধ বিএনপি গড়ে ওঠে। তৃণমূল পর্যায়ের এই সভা ও জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মনোবল অসামান্য বৃদ্ধি পায়। তারেক রহমান দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিতি থেকে বেরিয়ে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ইউনিয়ন প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে যেভাবে তৃণমূলে দলের শেকড় প্রোথিত করেন তাতে অশুভ রাজনৈতিক শক্তির পায়ের তলা থেকে মাটি সরতে থাকে। ফলে তাতে ষড়যন্ত্রকারীদের গায়ে জ্বালা ওঠে। বিএনপি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের দলা পাকানো হয় এবং এই চেষ্টা আজও অব্যাহত আছে।
প্রসঙ্গত, তারেক রহমান ২০০৯ সালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ধীরে ধীরে বিএনপির পুনর্গঠনে যুক্ত হন। ২০১৮ সালে, যখন তার মা, সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বেগম খালেদা জিয়া মিথ্যা অভিযোগে কারাবন্দি হন, তখন তাকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন মনোনীত করা হয়। তখন থেকেই তিনি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি তার পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও মাতা বেগম খালেদা জিয়ার মতোই দলকে শক্তিশালী করতে দিনরাত কাজ করে চলছেন। বর্তমানে তার নেতৃত্বে সারাদেশে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবি দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী।