ইউটিউব দেখে জাম্বু কোয়েল পাখির খামার করে সফলতা পেয়েছেন সদর উপজেলার উত্তর শালিকা গ্রামের বিদেশ ফেরৎ জাহাঙ্গীর আলম। নিজ বাড়িতেই নতুন এ জাতের কোয়েল পাখির খামারটি তৈরি করেছেন জাহাঙ্গীর। তার এ সাফল্য এলাকায় কোয়েল পালনে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। অনেক বেকার যুবক তার এই খামার থেকে কোয়েল পাখি সংগ্রহ করে ছোট আকারে শুরু করছে কোয়েল পাখি পালন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উত্তর শালিকা গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ২০১৭ সালে বিদেশ গিয়ে কয়েক বছর থাকার মধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০২০ সালে বাড়ি চলে আসে। বিদেশ থেকে ফিরে সুস্থ হয়ে জীবন-জীবিকার তাগিদে কিছু একটা করার জন্য জাহাঙ্গীর ইন্টারনেটে জাম্বু কোয়েল সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর গত বছর রাজবাড়ী থেকে ১৫ টাকা পিচ হিসেবে ৬০০টি জাম্বু জাতের কোয়েল পাখি সংগ্রহ করে শুরু করেন কোয়েল পাখির খামার। প্রথমদিকে ডিম ও মাংস বিক্রি দিয়ে শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে সে ডিম ফুটানোর মেশিন (ইনকিবিউটর) কিনে নিজেই শুরু করেন বীজ ডিম দিয়ে বাচ্চা উৎপাদন। বর্ধিত হতে থাকে তার কোয়েল পাখির খামার। বর্তমানে তার খামারে প্রায় ৬ হাজার কোয়েল পাখি। এর মধ্যে সে ৪০০টি করে ডিম পাড়ার জন্য রেখে দেয়। বাকিগুলো বাচ্চা ও মাংস হিসেবে বিক্রি করে। জাম্বু কোয়েল ওজনে বেশি হওয়ায় সে কোয়েল পাখি খুচরা বিক্রি করে জোড়া ১২০ টাকা। আর পাইকারদের কাছে জোড়া বিক্রি করে ১০০ টাকা। একদিনের বাচ্চা বিক্রি করছে প্রতি পিস ১৫ টাকা। ডিম বিক্রি করছে আড়াই থেকে তিন টাকা। প্রতি মাসে তার এই কোয়েল পাখির খামার থেকে সব মিলিয়ে গড়ে আয় হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা।
নিজের খামার ও সফল উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম যায়যায়দিনকে জানান, সাধারণ কোয়েলের চেয়ে আকারে বড় ও ওজন বেশি হওয়ায় জাম্বু কোয়েল পাখির চাহিদা বেশি। অল্প পরিমাণ ও স্বল্প পুঁজিতে কম সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায় এই জাতের কোয়েল পাখি পালনে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে কোনো প্রকারের সহযোগিতা এখন পর্যন্ত পাইনি। ঋণ সহায়তা পেলে আমার মতো গ্রামীণ খামারিরা বড় পরিসরে খামার করতে পারবে। ব্রয়লার, সোনালি, লেয়ারসহ বিভিন্ন মুরগি পালনের চেয়ে খরচ কম ও লাভ বেশি হয় জাম্বু কোয়েল পাখিতে। তাই এটি একটি সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্প হতে পাবে ভবিষ্যতে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, একটি কোয়েল বছরে প্রায় ২০০ ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের ওজন ১৫ থেকে ২০ গ্রাম। ২ মাস বয়স থেকেই কোয়েল পাখি ডিম দিতে শুরু করে। মুরগির ডিমের চেয়ে তিনগুণ বেশি ক্যালরি থাকে কোয়েল পাখির ডিমে। এছাড়া কোয়েল পাখির মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। কম পুঁজি বিনিয়োগে লাভ বেশি হওয়ায় সাধারণ কোয়েল থেকে জাম্বু কোয়েলের পালন দিন দিন বাড়ছে। খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ ও ওষুধ টিকা দেওয়া হচ্ছে।