সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
চরম ডাক্তার সংকটে মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স

যে উপজেলায় ৫৫ হাজার রোগীর জন্য চিকিৎসক মাত্র একজন

মুরাদনগর (কুমিলস্না) প্রতিনিধি
  ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যে উপজেলায় ৫৫ হাজার রোগীর জন্য চিকিৎসক মাত্র একজন

সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কারণে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কুমিলস্না জেলার মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স। এখানে ৩৭ জন ডাক্তারের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ১৭ জন। এর মধ্যে ১-২ জনকে আবার ট্রেনিং, সভা-সেমিনারসহ দৈনিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই তারাও রোগী দেখার সময় পান না। ফলে তাৎক্ষণিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ছেন ভুক্তভোগীরা। অপ্রত্যাশিত শারীরিক জটিলতায় অনেক সময় রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে সাধারণ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ ৩৭টি। তার মধ্যে ১২টি পদ শূন্য, একজন বিশেষজ্ঞসহ ৪ জন রয়েছেন প্রেষণে, ৪ জন আবার বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত। ফলে হাসপাতালে উপস্থিত আছেন মাত্র ১৭ জন চিকিৎসক। অন্যদিকে এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের অধীন জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮০ জন। সে হিসাবে উপজেলায় প্রতি ৫৪ হাজার ৯৯৩ জন মানুষের বিপরীতে চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র একজন। জনগণের আনুপাতিক হারে ভাগ করলে ১৮ হাজার ৬৯৮ জন মানুষের বিপরীতে হাসপাতালে বেড মাত্র একটি। মুরাদনগর স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের তুলনায় অন্য স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জনগণ অর্ধেক। সেক্ষেত্রে ওষুধ সামগ্রী এবং ভ্যাট ও বিছানা যা পাওয়া যায় সেটি দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে বাড়তি সংকটে পড়তে হয়। আর এ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জন্য অত্যন্ত কম হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ওষুধসহ অন্য সামগ্রী রোগীকে দিতে বেগ পেতে হয়।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ অনুযায়ী শুধু মেডিসিন, কার্ডিওলজি, গাইনি, অ্যানেস্থেসিয়া, শিশু ও অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসক রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে নেই সার্জারি, ইএনটি (নাক-কান-গলা), অপথালমোলজি (চোখ), ডার্মাটোলজি (চর্ম) রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। না থাকার ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে অন্য রোগের বিশেষজ্ঞ দিয়ে সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয়রা।

এদিকে আবার গ্রামের তৃণমূল মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের জন্য ২২ ডাক্তারের কথা থাকলেও আছেন মাত্র তিনজন। তার মধ্যে নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের একজন বাদে বাকি দুজনও আবার চিকিৎসক সংকটের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সেই রোগী দেখেন।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা শিক্ষক বেলাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, 'ডাক্তার কম থাকায় আমাদের দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের ভোগান্তি একটু বেশি। আবার অধিকাংশ সময় এখানে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে বেড পাওয়া যায় না। তাই ফ্লোরে চিকিৎসা নিতে হয়। ডাক্তার বেশি থাকলে ও বেডের সংখ্যা যদি বাড়ানো হতো তাহলে আমরা উপকৃত হতাম।' মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এনামুল হক বলেন, 'এখানে রোগীর আনুপাতিক হারে মেডিকেল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তারপরও আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী রোগীদের সেবা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। হাসপাতালে সার্জারি বিশেষজ্ঞ না থাকায় অধিকাংশ সময় খুব বেগ পেতে হয়।'

তিনি আরও বলেন, বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ৮ শতাধিক এবং অন্তর্বিভাগে সব সময় ৬৫ থেকে ৭০ জন রোগী ভর্তি থেকে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে দৈনিক ৭০ থেকে ৮০ রোগী চিকিৎসা নেন। কখনো এ সংখ্যা শতাধিকে গিয়ে দাঁড়ায়। পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং শয্যার ব্যবস্থা হলে কোনো রোগীকেই আর শহরমুখী হতে হবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে