নড়াইলের কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ধুঁকছে। গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসকের পদ, নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং রোগীরা। সরকারি খরচে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বেসরকারি ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ২ লাখ ৪৩ হাজার মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশা করেন ৫০ শয্যাবিশিষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স কালিয়াতে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের এই গুরত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চলছে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল ও চিকিৎসক সংকট।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের চিকিৎসক পদ ২১টি। রয়েছেন ১২ জন। চিকিৎসক সংকটের সঙ্গে রয়েছে নার্সসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকট। নার্সের পদ ৩৭টির বিপরীতে আছেন ২৫ জন, তৃতীয় শ্রেণির ২৮টি পদে আছেন ১৮ জন, চতুর্থ শ্রেণির মোট ৩৬টি পদে জনবল আছে মাত্র ৬টি। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছেন দায়িত্বরত চিকিৎসক এবং রোগীরা।
উপযুক্ত ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসাসেবা না পেয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছেন আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।
এক সময় সিজার ও অপারেশন হলেও এখন তা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। এতে করে প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি প্রাণঘাতীর ঘটনাও ঘটছে। অচল হয়ে পড়ে আছে এক্সরে মেশিন। সালামাবাদ ইউনিয়নের বৌদ্দপটি গ্রামের দাউদ আলী শিকদার বলেন, 'আমি স্ট্রোকের রোগী। দেড় মাসের মত হলো ডাক্তারের অভাবে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছি না, আজকে দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। শুধু আমি না, আরও অনেকে অপেক্ষা করছেন, ডাক্তার নেই।'
কাঞ্চনপুর গ্রামের সত্তর বছর বয়সের আব্দুর রউফ মোল্যা বলেন, 'আমার হাতের ব্যথার জন্য এসেছি। কিন্তু ডাক্তার পাচ্ছি না।'
স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ হাসিব বলেন, 'জনবল সংকটের কারণে আমরা খুবই বিপাকে আছি। এতগুলো পদে লোকবল না থাকায় রোগীর সঠিক সেবা দেওয়া ব্যাহত হয়। তারপরও আমরা চিকিৎসাসেবা দিতে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছি।' আরএমও (ভারপ্রাপ্ত) ডা. পার্থ প্রতীম বিশ্বাস বলেন, '৫০ বেডের হাসপাতাল হলেও তার বেশি রোগী থাকে, আউট ডোরে প্রতিদিন ৪৫০ জনের মত রোগী আসে তাদের সেবা দিতে ডাক্তার সংকটের জন্য আমাদের ডিউটি আওয়ারে বেশি সময় দিয়ে চাপের মধ্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।'
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুর রশিদ বলেন, জনবলের সংকট না থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার পত্র পাঠানো হয়েছে। এখনো শূন্য পদের অনুকূলে কোনো জনবল পাওয়া যায়নি। সিভিল সার্জন নড়াইল ডা. আব্দুর রশিদ বলেন, এ ব্যাপারে দ্রম্নত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।