শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আড়াইহাজারের কয়েকটি এলাকায় এখনো বাঁশের সাঁকো

রাজস্থলীর কুটুরিয়া পাড়া জরাজীর্ণ ব্রিজ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) ও রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২১
আড়াইহাজারের কয়েকটি এলাকায় এখনো বাঁশের সাঁকো
আড়াইহাজারের কয়েকটি এলাকায় এখনো বাঁশের সাঁকো

কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশের সাঁকো বিলীন হতে চললেও নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার বৃহত্তর মেঘনা নদী বেষ্টিত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায় বাঁশের সাঁকো লক্ষ্য করা গেছে। এ সমস্ত সাঁকো দিয়ে এখনো খাল নদী পার হয়ে লোকজন এ পাড়ায় ও পাড়ায় যাতায়াত করে থাকে। যদিও বেশ কয়েকটি এলাকায় বাঁশের সাঁকোর স্থলে পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। 

বৃহত্তর মেঘনা বেষ্টিত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, ওই ইউনিয়নের কালা পাহাড়িয়া টেহারহাট, পূর্বকান্দি সাহেব বাজার, উলুকান্দি, পূর্বকান্দি হিন্দু পাড়া- এ সমস্ত এলাকায় মেঘনা থেকে বয়ে আসা ছোট বড় খালের উপরে চারটি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। আশেপাশের গ্রামগুলোর লোকজন এ সমস্ত বাঁশের সাঁকো দিয়ে এ পাড়া থেকে ও পাড়ায় যাতায়াত করে থাকেন। বাঁশের সাঁকো গুলো যেন ছোট ছোট একটি পাড়ার লোকজনের সাথে অন্য একটি পাড়ার লোকজনের মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে। তাছাড়া ওই ইউনিয়নের রাধানাগর, পূর্বকান্দি সাহেব বাজার, ঝাউকান্দি, কালাপাহাড়িয়া, গোবিন্দপুর এবং কদমিরচর এলাকায় আরো ছয়টি বাঁশের সাঁকো দিয়ে লোকজন খাল বা নদী পারাপার হতো। ওই সমস্ত সাঁকোর স্থলে এখন পাকা ব্রিজ নির্মিত হওয়ায় লোকজনের চলাচল ও পারাপারে অনেকটা সুবিধা হয়েছে। 

1

এলাকাবাসী চান, বাকি সাঁকোর স্থলে ও যেন পাকা ব্রিজ নির্মাণ করে লোকজনের চলাচলের সুবিধার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন স্থানীয় সরকারের লোকজন। 

রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার তিন নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের কুটুরিয়া পাড়ার ছড়ার ওপর থাকা একটি ব্রিজ দীর্ঘদিন থেকে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। ব্রিজের পাটাতন ও রেলিং ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ভাঙাচোরা ও নড়বড়ে এ ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী এবং ইউনিয়নের কয়েক হাজার পথচারীসহ ছোট-ছোট যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া ব্রিজের ঠিক পূর্ব-দক্ষিণ পাশে রয়েছে মাদ্রাসা ও গ্রাম।

গ্রামের শত শত লোক এ ব্রিজ দিয়েই চলাফেরা করে। যেকোনো মুহূর্তে ব্রিজটি ভেঙে বাঙ্গালহালিয়া বাজার ইউনিয়ন পরিষদসহ সড়কের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়াও বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

জরাজীর্ণ ব্রিজটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে নতুন ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার তিন নং বাঙ্গালহালিয়া সফিপুর কুটুরিয়া পাড়ার ছড়ার ওপর প্রায় দুই যুগ আগে এ ব্রিজ নির্মিত হয়। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ও আড়াই মিটার প্রস্থের এ ব্রিজ দিয়ে ইউনিযনের হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছেন। প্রতিদিন চলাচলের জন্য ব্রিজটি ব্যবহার করতে হয় কয়েকশ' শিক্ষার্থীকে।

তাছাড়া ছোট ছোট পরিবহণ ও কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহনের যাতায়াতও এ ব্রিজ দিয়ে। কিন্তু প্রায় ছয় সাত বছর আগে জনগুরুত্বপূর্ণ এ ব্রিজটিতে ভাঙন দেখা দেয়। ব্রিজটির পাটাতন ও রেলিংয়ের কনক্রিট খসে রড বেরিয়ে যায়। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ অংশের রেলিং ভেঙে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং পাটাতনের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের মতো সৃষ্টি হয়েছে।

তারা জানায়, ব্রিজটি একদিকে জরাজীর্ণ, অন্যদিকে একেবারে সংকুচিত। যার দরুন পণ্যবাহী কোনো যান এ ব্রিজটি সহজে চলাচল করতে পারছে না।

স্থানীয় কলেজ শিক্ষার্থী মো. সাইফুল জানান, প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজ পার হয়ে তাকে কলেজে আসা-যাওয়া করতে হয়। স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি কলেজসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ' শিক্ষার্থীকে যাতায়াতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজ ব্যবহার করতে হয়। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে হলেও এ ব্রিজটির জায়গায় নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি তার।

স্থানীয় কৃষকরা বলেন, তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে তুলতে এ ব্রিজটি ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে গেলে কৃষিপণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ হয়ে পড়বে।

তিন নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কাইয়ুম হোসেন মিরাজ জানান, ব্রিজটি ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারপরও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ওই ব্রিজটি পার হয়েই তাকে বাজার, চন্দ্রঘোনা থানা ও ইউনিয়ন পরিষদে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

রাজস্থলী উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী অনুপ বড়ুয়া বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ওই ব্রিজটির স্থলে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে সেখানে ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং সাড়ে পাঁচ মিটার প্রস্থের ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

ছবি ক্যাপশন: রাঙামাটির রাজস্থলীতে তিন নং বাঙ্গালহালিয়া কুটুরিযা পাড়া এলাকার ছড়ার ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে