শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তামাক চাষে কমছে কৃষি জমির উর্বরতা

সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৯
তামাক চাষে কমছে কৃষি জমির উর্বরতা

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় তামাক চাষে কমছে কৃষি জমির উর্বরতা শক্তি। তামাকের বিষক্রিয়ার কারণে পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি কৃষক পরিবারের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃষি বিভাগের উদাসীনতা, তামাক উৎপাদনের আগে কোম্পানিগুলোর দর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদমুক্ত ঋণ, কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দেওয়া তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ।

1

কয়েক বছর আগেও সাতকানিয়া উপজেলার যেসব আবাদি জমিতে ধান, টমেটো, শিম, সরিষা ও আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হতো, সেসব জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে। তামাকজাত কোম্পানির প্রলোভন ও অধিক মুনাফার আশায় কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

অধিক টাকা খরচ করে ধানসহ অন্য ফসল চাষে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবং শ্রমিকের অধিক মজুরি হওয়ার কারণে কৃষকরা প্রতিবছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে লাভের আশায়, স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও, তারা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস বলছে, তামাক চাষ ও সেবন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক পাতার বিড়ি, সিগারেট, গুল, খইনি ও জর্দাসহ নানা ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করায় শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ক্যানসারসহ নানা রোগ বাড়ছে। তামাক চাষের কারণে কৃষকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিল, চরাঞ্চল ও জমিগুলোতে দিন দিন বেড়েই চলেছে তামাক চাষ। নারী-পুরুষ ও শিশুদের দিয়ে তামাকের পরিচর্যা করা হচ্ছে।

শুষ্ক মৌসুমে সাঙ্গু নদীর দুই পাড়ে জেগে ওঠা চরের জমিতে আবাদ হওয়া ফসলের মধ্যে এক তৃতীয়াংশই তামাক।

কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহনী গ্রামের কৃষক নজির আহমদ বলেন, সিগারেট কোম্পানির মাধ্যমে তামাক চাষিদের জন্য একর প্রতি জমিতে বীজ ও নগদ টাকা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে সারের জন্য দেওয়া হয় আগাম টাকা। শুধু তাই নয়, উৎপাদিত তামাক সঠিক মূল্যে কৃষকের বাড়ি থেকে কেনার নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়। এ কারণে এলাকায় রবি মৌসুমে তামাক চাষ বেড়েই চলেছে।

বাজালিয়া ইউনিয়নের হিন্দু পাড়া কোদালা বিলের তামাক চাষি আশরাফ জামান বলেন, বর্তমানে শ্রমিকের মজুরির হার অত্যধিক বেড়ে গেছে। যে টাকা খরচ করে ধানসহ অন্য ফসল উৎপাদন করা হয়, সেগুলো বিক্রি করেও আসল টাকাই ওঠে না। তাই সবকিছু চিন্তা করে অল্প খরচে কোম্পানির টাকায় তামাক চাষ করে মোটামুটি ভালো লাভ পাওয়া যায়।

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গত বছর উপজেলায় প্রায় ৩ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছিল। চলতি বছর ৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। বিনা পুঁজিতে লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকরা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তারপরও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে