আধুনিকতার ছোঁয়ায় হস্তশিল্প বাঁশবেত উপকরণের জমজমাট হাট দখলে নিয়েছে পস্নাস্টিক উপকরণ! ফলে হস্তশিল্প কারিগরেরা এখন দুঃসময় পার করছেন। একসময় বাঁশবেতের তৈরি কুলা, চালুন ঝুড়ি, ওড়া ও টুকড়িসহ নানা সব নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অনেক প্রচলন ও ব্যবহার থাকলেও সম্প্রতি হাটে বাজারে এসবের বিকল্প হিসেবে পস্নাস্টিকের আসবাবপত্র সহজলভ্য হওয়ায় কমতে শুরু করেছে বাঁশবেতের তৈরি এইসব উপকরণের চাহিদা।
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার অন্যতম রাজবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের একটি গলিতে ওড়া, কুলা, চালুন ও ঝুঁড়ি নিয়ে বসে আছেন হস্তশিল্পের কারিগররা। এসময় আবদুর রহিম আক্ষেপ করে বলেন, 'ঝাড় থেকে বাঁশ কেটে বেত তৈরি করে বানানো এইসব উপকরণ প্রতি সপ্তাহে বাজারে নিয়ে আসি বিক্রির উদ্দেশে। কোনদিন বিক্রি হয়, আবার কোনদিন অবিক্রিত থেকে যায়। বাজারে যে ভাবে পস্নাস্টিকের রাজত্ব বা প্রসার আমরা আর টিকে থাকতে পারবো না!'
হালেমা খাতুন বলেন, 'আমি বাঁশের উপকরণ তৈরি করি। কিন্তু সে অনুযায়ী বিক্রি হয় না। কাজ শেখা যেন অন্যায় বা ভুল হয়েছে! জনপদে বাঁশ উৎপাদন কম, কিন্তু দাম বেশি। সপ্তাহে জনপ্রতি ২০-২২টি চালন বা ঝুঁড়ি বানানো যায়। বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ১৫-১৬টি। প্রতিটির দাম ১২০-১৫০ টাকা। দৈনিক মজুরী দাঁড়ায় গড়ে ৩০০-৩৫০ টাকা! এই আয় দিয়ে চলা দায়।'
ডাইনছড়ির শফিক মিয়া বলেন, জনপদে বাঁশ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আর বাঁশ শিল্পের মধ্যে বেড়া, চাটাইয়ের কিছুটা চাহিদা থাকলেও অন্য উপকরণের জায়গায় দখলে নিয়েছে পস্নাস্টিক পণ্য! পরিবেশ বান্ধব বাঁশ ও বেত শিল্পকে বাঁচাতে হলে আগে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কামরুল আলম বলেন, একসময় উপজেলা পর্যায়ে বাঁশ, বেত শিল্পের ওপর প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রকল্প ছিল। এখন সেটি নেই। বাঁশ, বেত শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে আগে বাজারজাত নিশ্চিত করেই উৎপাদনে যেতে হবে। না হলে পস্নাস্টিক পণ্যের সঙ্গে এই শিল্প টিকবে না।