শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
এক বছরে আটক দুই শতাধিক আদালতেও মাদক মামলার জট

কুমিলস্নায় মাদক পরিবহণে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে

মো.আবদুল জলিল ভুঁইয়া. কুমিলস্না
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
আপডেট  : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩২
কুমিলস্নায় মাদক পরিবহণে নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ছে

বেশি আয়ের লোভ দেখিয়ে মাদক পরিবহনে নিরাপদ কৌশল হিসাবে নারীদের ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবহণ ছাড়াও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রনেও এখন নারীদের সম্পৃক্ততা বেড়েছে। গত এক বছরে কুমিলস্না জেলা পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিপ্তরের অভিযানে দুই শতাধিক নারী মাদকবহনকারী ও ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আটক নারীদের বেশির ভাগই তরুণী এবং মধ্য বয়সী।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, কয়েকগুণ বেশি উপার্জনের লোভ দেখিয়ে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র্য পরিবারের নারীদের দিয়ে মাদক পরিবহন করানো হচ্ছে। নারীরা বডিফিটিং (শরীরে বেঁধে) কিংবা শরীরে প্রবেশ করিয়ে মাদক পরিবহণ করলে ধরা পরার সম্ভাবনা কম। এমনটি মনে করেই তাদের সম্পৃক্ত করানো হচ্ছে এই অবৈধ কাজে। তবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জালে ধরা পড়ছেন তাদের অনেকেই। সাধারণত পুলিশ, বিজিবি,র্ যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাদক পাচার রোধে বিভিন্ন সময় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। সাম্প্রতিক সময়ে মাদক বিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনীও সহযোগিতা করছে পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে।

1

এদিকে কুমিলস্নায় প্রতিমাসে গড়ে দুইশ' মাদকের মামলা হয় বলে জানা গেছে। ডিসেম্বর মাসে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপিত তথ্য থেকে জানা গেছে, এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত কুমিলস্নার আদালতে মাদক ও চোরাচালানের ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে পুলিশের মামলার সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৭১টি এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের দায়েরকৃত ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৬২১টি। এসব মামলায় মাদক অপরাধে জড়িতরা মামলার দীর্ঘসূত্রিতার সুযোগ নিয়ে পার পেয়ে ফের মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পরে। যে কারণ সীমান্ত এলাকায় আদালতে ট্রাইবু্যনাল গঠন করে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে মাদক মামলা নিষ্পত্তির পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা।

জানা গেছে, ভারত থেকে কুমিলস্না সীমান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার হয় মদ, গাঁজা, ইয়াবা। এছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ, ফেণীর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিলস্নার উপর দিয়েই পাচার হয় মাদক। সম্প্রতি মাদক পাচার করার সময় বেশ কয়েকটি অভিযানে নারীদের গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, শুধুমাত্র পরিবহণ করাই তাদের কাজ। এ জন্য পাওয়া যায় মোটা অঙ্কের টাকা। কুমিলস্না জেলা পুলিশের তথ্য মতে, গত এক বছরে কুমিলস্না জেলায় মাদক মামলায় ১৭১ জন নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কুমিলস্না কার্যালয়ের অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছে ৩২ জন। এছাড়াও ১০ বিজিবি ও ৬০ বিজিবির সদস্য সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক পাচারের সময় আরও ১৪ জন নারীকে আটক করেছেন। যাদের বেশিরভাগই মাদক পরিবহণ কাজে নিয়োজিত।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কুমিলস্নার উপ-পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান জানান, টাকার লোভ দেখিয়ে নারীদের মাদক পরিবহণে ব্যবহার করা হচ্ছে। নারী হওয়ায় তলস্নাশিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখ এড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলেই মাদক কারবারিরা তাদের ব্যবহার করছে। এসব নারীর বেশিরভাগই নিম্নআয়ের কাজ করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে এমনও তথ্য জানা গেছে, কারা তাদের গাঁজা কিংবা ইয়াবা দিচ্ছে তাও তারা জানেন না। তাদের কাজ শুধু টাকার বিনিময়ে পাচার করা।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানা গেছে, মাদক পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত নারীরা যে শুধু কুমিলস্না জেলার বাসিন্দা এমন নয়, বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নারীরাও গ্রেপ্তার হয়েছে কুমিলস্নায়।

বিশিষ্ট আইনজীবী বদিউল আলম সুজন জানান, 'মাদক মামলার বিচারকার্যে গিয়ে আমরা পুলিশের তদন্তে গাফিলতি লক্ষ্য করি। এসব কারণেও আসামিরা পার পেয়ে যায়। আমাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদকের মামলা যে পরিমাণ হচ্ছে তারচেয়ে কম নিষ্পত্তি হচ্ছে। যে কারণে জট বাড়ছে। সেক্ষেত্রে একটি ট্রাইবু্যনাল স্থাপনের মাধ্যমে এসব মামলার দ্রম্নত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।'

কুমিলস্না আদালতের পিপি (সরকারি কৌসুলি) কাইমুল হক রিংকু জানান, 'আমরা চেষ্টা করছি মাদকের মামলার জট কমিয়ে আনতে। কুমিলস্না আদালতে একটি আলাদা ভাগ রয়েছে, যেখানে মাদকের মামলা নিষ্পত্তি হয়। আমরা চেষ্টা করব তদন্তকারী সংস্থার সক্রিয়তায় এসব মামলা দ্রম্নত নিষ্পত্তি করতে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে