শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ডুমুরিয়া অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প

শোলমারী নদীর ড্রেজিংসহ ২৪টি খাল পুনঃখননের গণশুনানির সুপারিশ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়
ডুমুুুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ডুমুরিয়া অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প

খুলনা জেলার আওতাধীন বিলডাকাতিয়াসহ জলাবদ্ধ ডুমুরিয়া অঞ্চলের পানি নিরসনে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত সমীক্ষা প্রকল্পের ডিপিবি ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে বলে বাপাউবো জানিয়েছে। বলা হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী সমাধান হবে।

জানা যায়, খুলনার নদ-নদীর নাব্যতা হ্রাসের ফলে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় বিল ডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া অঞ্চলের ছোট বড় ২৩টি বিল। যার আয়তন প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর কৃষি ভূমি। প্রতিবছর আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি কৃষিজাত ও মৎস্যজাত ফসল উৎপাদিত হয়। খুলনা অঞ্চলের প্রধান নদী আতাই, ভৈরব, রূপসা, হরি, ভদ্রা ইত্যাদি। জোয়ারের সঙ্গে সমুদ্র থেকে আসা প্রচুর পলি নদীর তলদেশে জমে পড়ায় নদীগুলো নাব্য সংকটে পড়েছে। এটা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা খুলনা বিভাগে একটি ভয়ানক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলে নদী সমূহে প্রবাহের জন্য উজানের মিঠা পানির উৎস্য খুবই সীমিত। গঙ্গা নদী থেকে উৎপন্ন গড়াই হলো এ অঞ্চলের সব নদীর মিঠা পানির একমাত্র উৎস। গঙ্গা ব্যারেজের কারণে গঙ্গা নদীতে নিয়ন্ত্রিত প্রবাহের ফলে গড়াই দিয়ে যে প্রবাহ প্রবেশ করে তা এ অঞ্চলে জালের মত বিস্তৃত অসংখ্য নদী সমূহের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ফলে নদীর নাব্য হারানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

1

ডুমুরিয়া উপজেলায় হরি-ভদ্রা নদী সিস্টেমের সাথে সম্পর্কিত শোলমারী নদীতে সম্প্রতি এ সমস্যা তীব্র হয়ে উঠেছে। বাপাউবো খুলনার আওতাধীন ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রবাহিত শোলমারী নদীটি রূপসা নদী হতে উৎপত্তি হয়ে টিয়াবুনিয়া নামকস্থানে লোহার সালতা নাম ধারণ করে ভদ্রা নদীতে পতিত হয়েছে। যার মোট দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার। নদীটির উজারের মুখ রূপসা ও ভাটার মুখ ভদ্রাতে পতিত। নদীর দুই দিক দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করার কারণে শোলমারী নদী পলি পতনের হার অনেকটা বেশি। গত ২-৩ বছরে নদীর তলদেশ সম্পূর্ণভাবে ভরাট হয়ে গেছে। যার ফলে শোলমারী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত প্রায় সব পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ও সেচ সুবিধা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। শোলমারী ১০ ভেন্ট, রামদিয়া ৯ ভেন্ট, সিন্দুরতলা ২ ভেন্ট ও রামদিয়া ২ ভেন্ট রেগুলেটরের সামনে ভরাট হয়ে নদীর তলদেশ রেগুলেটরের সীল লেভেল থেকে গড় ১.৫-২.০ মি. উঁচু হওয়ায় রেগুলেটর সমূহের ক্যাচমেট বিলসমুহে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে বাপাউবো খুলনা বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া জানান, 'নদীর নাব্যতা সংকটের কারণে বিল ডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া ও ফুলতলা অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর তারিখে শোলমারী নদীর তলদেশ ভরাট ও খননের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ হল রুমে গণশুনানীর ভিত্তিতে সুপারিশমালাসহ প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে। ইউএনও মুহা. আল-আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে প্রধান অতিথি ছিলেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব আব্দুলস্নাহ আল আরিফ। প্রকল্পে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বর্তমান পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। এটি অনুমোদনসহ বাস্তবায়ন হলে আশাকরি এঅঞ্চল জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে।'

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শোলমারী নদীর উৎপত্তি মুখ (রূপসা নদী) থেকে ভদ্রা নদী পর্যন্ত মোট ১৫.৫ কিলোমিটার ড্রেজিং, শোলমারি ১০ ভেন্ট রেগুলেটর ও রূপসা নদীর মধ্যবর্তীস্থানে অবস্থিত সিন্দুরতলা, ঠাকুরমারি, ও ছয়ঘরিয়া স্স্নুইজ গেটের সংযোগ খাল, পুটিমারী খাল, জোড়াবটতলা খাল, ঠিকাদারবুড়ি খাল, বরুনার খাল, কাটাখাল, সন্ধ্যার খাল, সালতিয়া খাল, চহেড়া খাল, খর্ণিয়ার খাল, কালীঘাট খাল, খয়রামারী খাল, নালার খাল ও পাশখালী খালসহ ২৪টি খাল পুনঃখনন, শোলমারি ১০ ভেন্ট রেগুলেটর মুখ থেকে আপার শোলমারী অর্থাৎ কৈয়া ব্রীজ পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটার খনন প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে