পরীক্ষামূলকভাবে বিনা চাষে সরিষা আবাদে সাফল্য অর্জন করেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে একইসাথে সাথি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ হওয়ায়, একদিকে যেমন সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাবে, একই সাথে বাজারে ভোজ্যতৈলের চাহিদা পুরন করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোজ্য তৈল আমদানিতে যেমন চাপ কমবে, একই সাথে আমদানি ব্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার উপরও চাপ কমবে।
উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরিষার হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে মাঠের পর মাঠ। মাঠ জুড়ে হলুদ রঙ্গে ছেয়ে গেছে প্রকৃতি, এরই মাঝে ধান ক্ষেতের মধ্যে বিনা চাষে সরিষা চাষ করেছে অনেক কৃষক, কৃষকরা জানায় কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে বিনা চাষে পরিক্ষামূলক ভাবে ধান ক্ষেতের মধ্যে তারা সরিষার বীজ বপন করেছিল, এতে দেখা গেছে ধানে পাশাপাশি, সাথি ফসল হিসেবে সরিষাও চাষ হচ্ছে, এই সরিষা উঠে তারা একই জমিতে বোরোধান চাষ করবে। পরিক্ষামুলক ভাবে ধান ক্ষেতে সরিষা চাষ করে সাফল্য পাওয়ায়, আগামীতে সরিষা চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানায় কৃষকরা।
তেতুলিয়া গ্রামের কৃষক মাহমুদ আলম বলেন ধান ক্ষেতে সরিষা চাষ করে তিনি সাফল্য পেয়েছেন, তিনি বলেন একই সাথে সরিষা ও ধান চাষ হওয়ায়, একদিকে যেমন একই জমিতে তিন পসল হচ্ছে, অন্য দিকে উৎপাদন মুল্যও কমে যাচ্ছে, এতে করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। একই কথা বলেন খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক নুর আলম ও রাজারামপুর গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে এ বছর ১৮২৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে, উৎপাদন লক্ষমাত্রা নিদ্ধারন করা হয়েছে২৬৬১ মেট্রিকটন।
এদিকে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরিষা তৈলের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে, তৈলমীল মালিকরা জানায় এখন সোয়াবীন পামওয়েল তৈল থেকে সরিষা তৈলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, একই সাথে বাজারে সরিষা তৈলের দামও কমেছে।
জেলার বানিজ্য দপ্তর সুত্রে জানা গেছে দিনাজপুর জেলার ৩৩ লাখ ১৫ হাজার জনগণের জন্য ৪০ হাজার মেট্রিকটন ভোজ্য তৈলের প্রয়োজন হয়, এর মধ্যে স্থানীয় উৎপাদিত সরিষা থেকে ১২ ভাগ ভোজ্য তেলের যোগান আসে, তবে বর্তমানে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ যোগান বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে বানিজ্য অধিদপ্তরের একটি সুত্র জানায় ফুলবাড়ীতে তিন লাখ জনসংখ্যার জন্য ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিকটন। উপজেলার তৈলমীল মালিকরা জানায় প্রতিটন সরিষা থেকে ৪০০ লিটার তৈল উৎপাদন করা হয়, সেই হিসেব অনুযায়ী ২৬৬১ মেট্রিকটন সরিষা থেকে এক হাজার ৬শ ৬৪ লিটার তেল উৎপাদন হবে করা সম্ভাব হবে, যা ভোজ্য তৈলের মোট চাহিদার ৩০ ভাগ।
প্রগতিশীল রাজনীতিবীদ সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন দেশে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেলে দুটি বিষয়ে লাভ হয়, এক দিকে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রনে আসে অপরদিকে উৎপাদিত সরিষা থেকে ভোজ্য তৈল দিয়ে চাহিদা পুরন করায়, ভোজ্য তৈল আমদানীর উপর চাপ কমে, এতেকরে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। এজন্য তিনি তৈল জাতীয় পন্য উৎপাদনে কৃষকদের আরো বেশি পরামর্শ ও কৃষি প্রনোদনা বৃদ্ধি করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন এ বছর উপজেলায় ১৮২৩ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে এর মধ্যে ৮ থেকে ১০ এক জমিতে পরিক্ষামূলক ভাবে বিনা চাষে সরিষা আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, পরিক্ষামূলক ভাবে বিনা চাষে সরিষা আবাদ করে কৃষকরা সাফল্য অর্জন করায় আগামীতে সরিষা চাষ আর বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।