পুরনো রাস্তা কেটে অস্থায়ী ভিত্তিতে বেইলি বসিয়ে নিমার্ণাধীন টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কংশুর বাসস্টান্ড সংলগ বেইলি ব্রিজের একটিতে ফাটল অপরটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যে কোন সময়ে সেটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মহসড়কটিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের আশংকা রয়েছে। আর ওই স্থানটিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে খুলনা, গোপালগঞ্জের সাথে মাদারীপুর, শরিয়তপুর, বরিশালের যোগাযোগ বন্দ হয়ে নির্মাণাধীন উন্নয়নমূলক কাজেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি ও ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি দ্রম্নত মেরামত করে টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়ক সচল রাখা এবং ওই স্থানে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।
জানা যায়, টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কংশুর নামক স্থানে কংশুর খালের মূখ বন্ধ ছিল। এলাকার কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে বদ্ধ খালে ইজার বন্ধ করে দীর্ঘ ৫৫ বছর পূর্বে পাকিস্তান আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া কংশুর খাল নদীর সাথে সংযোগ সৃষ্টি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্বাবধানে খালের বন্ধ মূখ নদীর সাথে সংযোগ সৃষ্টি করে গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর খাল খনন কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর সড়ক বিভাগের উদ্যোগে খাল মুখে পুরনো রাস্তা কেটে ফেলা স্থানে দুইটি বেইলি স্থাপন করে যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দেয়। এরপর থেকে মধুমতি নদীর পানি প্রবেশ করতে থাকে কংশুর খালে, আনন্দের বন্যা বয়ে যায় কংশুর, খাটিয়াগড়, ডালনিয়া, করপাড়া, বলাকৈড়, বনগ্রাম, তাড়গ্রামসহ ২০ টি গ্রামের কৃষকের মাঝে। ওই খালের পানি দিয়ে দৈনন্দিন কাজ সারেন দুই পাড়ের বাসিন্দারা। এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর জমির দীর্ঘ ৩০ বছরের জলাবদ্ধতা দুর করে নতুন করে অধিক ফলন পাবার আশায় অনাবাদি জমিতে নতুন করে চাষাবাদ শুরু করেন কৃষকরা।
সড়ক বিভাগ সেসময়ে বলেছিল তারা কংশুরে একটি খোলা ব্রিজ করবে আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছিল তারা ওই খালের নদীমুখে একটি বোটপাস নির্মাণ করবে। কিন্তু বোটপাস বা খোলা ব্রিজ কোনটিই সেখানে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অতিসম্প্রতি সড়ক বিভাগ যাবতীয় কার্যক্রম, সংযোজন, বিয়োজন ও অনুমোদন শেষ করে টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গেলেও সওজ ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশে তা স্থগিত হয়ে গেছে বলে সওজ গোপালগঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়।
নির্মাণাধীন টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কংশুরে পুরনো সরু রাস্তা কেটে ২০২২ সালে ডিসেম্বরে দুটি বেইলি ব্রিজ অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থাপন করা হয়। যেগুলো বর্তমানে ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ। একটি বেইলির পেস্নট ফেটে যাওয়ায় সেটি বন্ধ করে সড়ক বিভাগ মেরামতের চেষ্টা করছে। অপরটি দিয়ে বর্তমানে যানবাহন চলাচল করলেরও সেটি দিয়ে ৫ টনের অধিক ধারণক্ষমতার যানবাহন চলাচল নিষেধ কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিদিন কয়েক'শ পাথর বোঝাই ট্রাক চলাচল করে, যার প্রতিটির ওজন ৪০ থেকে ৫০ টন। এ কারণে কংশুরে যেকোন সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে, প্রানহাণিও ঘটতে বলে এলাকাবাসীর আশংকা।
এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক বিভাগ গোপালগঞ্জের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকি বলেছেন, আমরা নড়াইল থেকে মালামাল এনে দ্রম্নত কংশুরের ক্ষতিগ্রস্ত বেইলিটি মেরামত করার চেষ্টা করছি। আশা করছি আগাশী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেরামত সম্পন্ন হবে। দু'টি বেইলিই ব্যবহার করা যাবে। তবে যেহেতু বেইলি দুটি অস্থায়ী ভিত্তিতে অল্পদিন ব্যবহারের জন্য স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। কংশুরে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ একান্ত প্রয়োজন।
গোপালগঞ্জ সড়ক বিভারে নির্বাহী প্রকৌশলী আযহারুল হক বলেছেন, কংশুরে একটি ব্রিজ নির্মান ওই এলাকার মানুষ ও তাদের তৃষিকাজের জন্য একান্ত প্রয়োজন। যেহেতু কংশুর খাল নদীর সাথে সংযোগ করা, নিয়মিত যোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ করে। তাছাড়া টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রচুর গাড়ির চাপ থাকায় অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থাপন করা বেইলি দু'টি ওই সড়কের ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। কংশুরে একটি ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আবেদন নিবেদন করা হচ্ছে। আশা করছি ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাস্তব অবস্থা বিচেনা করে দ্রম্নত ব্রিজ নির্মানের নির্দেশনা দেবেন। এরপরই ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান বলেছেন, টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ-ঘোনাপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কংশুরে দুটি বেইলি ব্রিজ আছে, যা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। একটি ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সড়ক বিভাগ মেরামত করার চেষ্টা করছে। যেহেতু এই সড়কটি একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক, তাই সড়কটির কংশুরে একটি নতুন ব্রিজের ব্রিজ নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। যেহেতু ওই স্থানটিতে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন হয়েছে, সেহেতু ব্রিজ হবেই। আমি সড়ক বিভাগের ঊধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। আশা করছি দ্রম্নত কংশুর বাসস্টান্ড সংলগ্ন বেইলি ব্রিজের পাশেই নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। একই খালের নদীমুখে পানি উন্নয়ন বোর্ডও একটি বোটপাস নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে আমি আশা করছি। আর এর ফলে কংশুর খালটি সচল থাকবে, এলাকার বিলের জলাবদ্ধতা দূর হবে, কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।