বুধবার, ০৭ মে ২০২৫, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২
দুর্ভোগে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা

রাজস্থলীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট

রাজস্থলী (রাঙামাটি) প্রতিনিধি
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
রাজস্থলীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট
রাঙামাটির রাজস্থলীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানির অভাবপূরণে শিক্ষার্থী কলসিতে করে পানি সংগ্রহ করছে -যাযাদি

রাঙামাটির রাজস্থলীতে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গভীর নলকূপ না থাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে অধিকাংশ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকুকর্মচারীরা। এমন দৃশ্য দেখা যায় উপজেলার ২নং গাইন্দ্যা ইউনিয়নের চিংখ্যং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সুপেয়ে পানির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দুর্ভোগে রয়েছেন। পানি পান করার জন্য তাদের বিদ্যালয়ের পাশের ছড়া থেকে পানি নিয়ে আনতে হয় কলসি ভরে।

চিংখ্যংসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক নুচিংমং মারমা বলেন, প্রায় ২০-২৫ বছর আগে বিদ্যালয়ের টিউভওয়েলটি বিকল হয়। পরে স্থানীয় মেকানিকের মাধ্যমে মেরামত করে পানি তোলার ব্যবস্থা করা হয়। কিছু দিন যেতে না যেতে বিকল হয়ে যায়। সেজন্য বিদ্যালয়ের পাশের ছড়া থেকে পানি এনে পান করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তার বিদ্যালয়ে দপ্তরি না থাকায় অনেক সময় শিক্ষার্থীরা কলসিতে করে পানি এনে পান করে। এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৫০/৬০ জন। সকল শিক্ষার্থী প্রায় উপস্থিত থাকে। কিন্তু নলকূপ না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, শরীরের রক্ত সঞ্চালন ও শরীরের কার্যক্রমকে সক্রিয় রাখার ক্রেত্রে পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এছাড়া শরীরের চাহিদা মোতাবেক পানি পান করতে না পারায় শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রতিবন্ধকতা হয়। চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না করলে কিডনীজনিত সমস্যাও হতে পারে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাজুরুল ইসলাম বলেন, রাজস্থলী উপজেলায় সরকারি ৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে নেই কোনো গভীর নলকূপের ব্যবস্থা। যার ফলে স্কুলে আসা কোমলমতি শিশুরা খাবার পানির অভাবে নানা দুর্ভোগে পড়ে। কেউ কেউ পানির জন্য ছুটে বেড়ায় আশপাশের বাড়িগুলোতে। এসব জায়গায় পানি না পেলে তারা বিশুদ্ধ পানির বদলে অনেক সময় অনিরাপদ উৎস থেকে (খাল, ঝর্ণা, ঝিরি, ছড়া, পুকুর) খাবার পানি সংগ্রহ করে। ফলে শিশুরা আক্রান্ত হয় বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে।

এ বিষয়ে উপজেলা উপ সহকারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আরাফাত হোসেন জানান, উপজেলার অধিকাংশ স্কুল পুরোনো। এই সমস্ত স্কুলে অনেক আগে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছিল। তবে অনেকগুলো গভীর নলকূপ ব্যবহারের অভাবে বিকল হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় নলকূপ স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। যার ফলে স্কুলে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অথচ প্রতি ৫০ জন মানুষের জন্য একটি গভীর নলকূপ ও প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুপেয় পানি শতভাগ নিশ্চিত করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে।

উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে গভীর নলকূপের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে পানির সংকটের বিস্তারিত তুলে ধরে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে গভীর নলকূপ স্থাপন করার দাবি জানিয়েছেন। আমরা আবেদনের প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন স্কুলে নলকূপের পস্ন্যাটফর্ম আছে, নলকূপ নেই। আবার নলকূপ আছে, কিন্তু পানি ওঠে না। অনেকগুলো নলকূপ একেবারে অচল অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কলসী কাদে ও কোমড়ে করে পানি আনতে দেখা যায়।

অপরদিকে শিলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অংথোয়াই মারমা জানান, আশপাশে কোথাও গভীর নলকূপ নেই। পানির জন্য অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।ঝিড়ি থেকে ৫০০ ফুট উপরে বিদ্যালয়। পানির উৎস খুজতে ৫০০ ফুট নিচে নামতে হয় শিক্ষার্থীদের।

ইউএনও সজীব কান্তি রুদ্র বলেন, 'অধিকাংশ স্কুলের গভীর নলকূপ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অনেক জায়গায় আবার একেবারেই নেই। আমরা এ ব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেছি। কিছু বরাদ্ধ পেয়েছি, আশা করি দ্রম্নত সমস্যার সমাধান হবে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে