মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রমজানে পর্যটক শূন্য কক্সবাজার

জাবেদ আবেদীন শাহীন
  ২৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

পর্যটন নগরী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিশাল বিশাল ঢেউ, ঢেউয়ের গর্জন, হিমেল হাওয়া, সুর্যাস্ত সবই রয়েছে কিন্তু নেই- পর্যটকের সোরগোল। রমজানের শুরু থেকেই কলাতলী থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে সৈকতজুড়ে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। কোথাও পর্যটকের পদচারনা চোখে পড়ে না। রমজান শুরু থেকে জনশূন্য হয়ে আছে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলো। খালি রয়েছে আবাসিক হোটেল মোটেলের কক্ষগুলো। প্রথম রমজান থেকেই এই পরিস্থিতি। এতে বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে ঈদের আগে পর্যটক বাড়ার আশা করছেন তারা।

এদিকে, হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন কক্সবাজারে রমজান মাসে কিছুসংখ্যক পর্যটক ভ্রমণে আসেন। তাই কক্সবাজারে আরও বেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পুরো রমজানে শহরের প্রায় হোটেল-মোটেলে রুম ভাড়ার বিপরীতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করেছে একাধিক হোটেল-মোটেল।

রোববার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, হিমছড়ি, সী-গাল পয়েন্ট, মোটেল শৈবাল মোড়, বালিকা মাদ্রাসাসহ আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে সৈকতে একেবারেই পর্যটক শূন্য। কোথাও একজন পর্যটক কিংবা স্থানীয় লোক দেখা যায়নি। সৈকতের পর্যটকদের বসার জন্য কিটকটগুলো খালি পড়ে আছে। রমজানের শুরু থেকে কক্সবাজারে পর্যটক না থাকার কারণে পর্যটন জোনে ছোট-বড়, অভিজাত, সাধারণ মিলিয়ে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও কটেজগুলোর বুকিংও শূন্য। শুধু হোটেল-রেস্টুরেন্ট নয়, রমজানের কারণে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাগুলোও বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে সৈকত এলাকার ঝিনুকের দোকান, বার্মিজ আচারের দোকান, বিভিন্ন মার্কেট, মাছ ফ্রাই

এবং কাপড়ের দোকানগুলো ৯০ শতাংশ বন্ধ রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে ক্রেতা না থাকায় পর্যটন জোনের বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটক না থাকায় এখন হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোকে নতুন রূপে সাজানোর কাজে ব্যস্ত কর্তৃপক্ষ। অনেক হোটেলের কক্ষ থেকে শুরু করে বাহ্যিক স্থানগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নতুন করে সাজাচ্ছেন ঈদ-পরবর্তীর দিনগুলোর জন্য।

লাবণী পয়েন্ট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিব উলস্নাহ বলেন, রমজানের পর্যটক না থাকায় বেচাকেনা হয় না। তাই দোকান বন্ধ রাখা রয়েছে। তবে ঈদের পর ব্যবসার জন্য ২৫ রমজানের পর থেকে নতুন করে মালামাল ওঠানোসহ প্রস্তুতির কথা জানান তিনি। ফটোগ্রাফার ইসতিয়াক মারুফ বলেন, এখন রমজান মাস তাই কোনো পর্যটকের দেখা নেই। এ সময়টা আমাদের ব্যবসা মন্দা থাকে। কিছু করার নেই। ফিস ফ্রাই দোকানি মো. জামাল হোসেন জানান, রমজানে পর্যটক না থাকলে খাবে কে। তাই এখানকার সব ফিশ ফ্রাই দোকান বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কিটকট ব্যবসায়ী হারুন বলেন, প্রতিদিনই রোজা রাখছি। সকালে এসে বসে থাকি। কিছু চেয়ার বিছিয়ে রাখা হয়েছে। মাঝেমধ্যে স্থানীয়রা এখানে এসে সাগর পাড়ে বসে। এতে কিছু আয়-রোজগার হলে পরিবার চলে। খুবই সময়টা খারাপ যাচেছ। তারপরও খুশির কারণ ক্ষণিকের কষ্ট সহসা কেটে যাবে এটি বিশ্বাস রয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, স্বাভাবিকভাবে রমজান মাসে পর্যটক তেমন থাকে না। এবার কিন্তু পর্যটকশূন্যতা বেশি দেখা যাচ্ছে। সব ধরনের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে বুকিং শূন্যের কোটায়। তবে পর্যটন মৌসুম শেষ হলেও ঈদে বেশ পর্যটক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন হয়তো কয়েক দিনের ব্যবসায় এসব ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে বলে জানান তিনি।

গ্র্যান্ড সেন্ডির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহমান বলেন, পুরো রমজান মাস পর্যটক থাকে না। ফলে বুকিং শূন্য থাকবে সব কক্ষ। এখন হোটেলকে নতুন রূপে তৈরির উপযুক্ত সময়। তাই হোটেলের কক্ষগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে শুরু করে বাহ্যিক স্থানগুলোকেও নতুন করে সাজানো হচ্ছে। রমজানের কারণে পর্যটক না থাকায় তাদের জীবনের ছন্দ কেটে গেছে। তবে আশা করছি ঈদের আবার নতুন করে ছন্দ ফিরবে।

রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, রমজানে কক্সবাজারের অন্য স্থানে ইফতারি ও সেহরির বেচাকেনা হলেও পর্যটক এলাকায় তা তা নগণ্য। তাই অধিকাংশ হোটেল ও রেস্টুরেন্ট এখন বন্ধ রাখা হয়েছে। গুটি কয়েক রেস্টুরেন্ট খোলা রয়েছে যেগুলোতে স্থানীয় লোকজন ইফতার করতে যায়। তাছাড়া হোটেল-মোটেল জোনে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করার হয়তো কিছু পর্যটক আসতে পারে।

হোটেল-মোটেল কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উলস্নাহ বলেন, রমজানে পর্যটক না থাকায় বহু হোটেল-কটেজে কর্মচারী ছাঁটাই করেছে। যারা এতদিন শ্রম দিয়ে কাজ করেছে শুধু পর্যটক না থাকার কারণে ছাঁটাই হয়েছে অনেকে। এতে পুরো রমজান ও ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্ট পাবে তারা। তাই এদের জন্য কর্তৃপক্ষের অবশ্যই সহযোগিতা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে