বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সমতলের আদিবাসীদের জন্য বাজেটে ৫শ' কোটি টাকা বরাদ্দের দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি
  ৩০ মে ২০২৩, ০০:০০

দেশের আদিবাসীরা চরম বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। জাতীয় বাজেটে আকার বড় হলেও আদিবাসীদের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সমতলের আদিবাসীদের জন্য থোক বরাদ্দ ছিল ১শ' কোটি টাকা। যা সমতলের ৩০ লাখ আদিবাসীর গড় হিসেবে দাঁড়ায় মাত্র ৩৩৩ টাকা। সমতলের আদিবাসীদের জন্য এই বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।

এছাড়া বণ্টন এবং ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার নানা জটিলতার কারণে আদিবাসী জীবনমান উন্নয়নে বরাদ্দকৃত এই বাজেট আদিবাসীদের জীর্ণকুটিরে পৌঁছায় না। ফলে জাতীয় বাজেটে সমতলের আদিবাসীদের জন্য নূ্যনতম ৫শ' কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ ও পৃথক দপ্তর স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন।

সোমবার সকাল ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে মৈত্রী মিলনায়তনে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী নেত্রী রাখী ম্রং-এর সভাপতিত্বে ধারণাপত্র পাঠ করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক অবনী কান্ত হাজং। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে আদিবাসী ইউনিয়নের প্রধান উপদেষ্টা ডা. দিবালোক সিংহ, সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত মাহাতো, সিপিবির সহ-সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ।

প্রধান উপদেষ্টা ডা. দিবালোক সিংহ বলেন, এ দেশে আদিবাসী মানুষগুলোর জীবন নানারকম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সমতলের ৮০ শতাংশ আদিবাসী দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৬৫ শতাংশ আদিবাসী মানুষ দরিদ্র। বিশ্ব মহামারি করোনার সময়ে ৯২ শতাংশ আদিবাসী মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ে- যা এখনো তারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। মূলত বছর বছর বাজেটের আকার বাড়লেও তার প্রতিফলন আদিবাসীদের জীবনে নেই বললেই চলে। কারণ জাতীয় বাজেট আদিবাসীবান্ধব হয় না। এ দেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো মূল স্রোতের মানুষের চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রিত। বিগত বছরগুলোতে বাজেটে আদিবাসীদের জন্য পৃথক বাজেট উলেস্নখ থাকলেও কয়েক বছর হয় তা বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা কোনো মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরও নেই।

বক্তারা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সুবিধা থেকেও আদিবাসীরা বঞ্চিত। বর্তমানে মানুষের মাথা পিছু গড় আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে। কিন্তু একজন গারো, হাজং, কোচ, বর্মণ, রাজবংশী, সাঁওতাল, মাহাতো, পাহান, মাহালি, মুন্ডা, পাহাড়িয়া, মালো, বাগদী ও অন্যান্য যারা আছেন তাদের মাথাপিছু গড় আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলারে পৌঁছানোর আশা সুদূরপরাহত।

সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশ ও দাবিসমূহ তুলে ধরে আদিবাসী ইউনিয়নের নেতারা বলেন, ১০০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচি ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখাতে দরিদ্র আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্তিসহ তাদের জন্য স্থায়ী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। জাতীয় বাজেটে বাঙালি, পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসীদের বাজেট বৈষম্য নিরসন করতে হবে। ভূমিহীন আদিবাসীদের খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়াসহ গৃহহীনদের জন্য ঘর বরাদ্দের বাজেট নিশ্চিত করতে হবে এবং বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আদিবাসী তরুণদের জীবিকায়ন ও কর্মসংস্থানে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে