পানি প্রবাহ না থাকলেও তা ধরে রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছে তিনটি স্স্নুইস গেট। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নাগদার খাল ও মুন্দাইল খালে দেড় কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করে এ স্স্নুইস গেট নির্মাণ করা হয়। ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় গত ১০ বছরে এ তিনটি স্স্নুইস গেট নির্মাণ করা হলেও তা কোনো উপকারে আসছে না। শুষ্ক মৌসুমে খালে পানি না থাকা ও নাব্য সংকটে স্স্নুইস গেট তিনটি উপকারের বদলে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্স্নুইস গেটগুলোর যন্ত্রপাতিও বিকল হচ্ছে।
জানা গেছে, ষোলোটাকা ও রাইপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে চলা মুন্দাইল খাল সংযুক্ত হয়েছে মড়কা নামক স্থানে নাগদার খালে। খাল দু'টির আশপাশে কয়েক হাজার হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ক্ষেতের পানি নিষ্কাশন ও শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য খাল দু'টিতে তিনটি স্স্নুইস গেট নির্মাণ করা হয়।
মুন্দাইল খালে ২০১৭ সালে ৮৫ লাখ ৬১ হাজার ১১৯ টাকা ব্যয়ে একটি ও ২০০৮ সালে নাগদার খালের ওপর ৮৬ লাখ ৮৯ হাজার ৯৩৮ টাকা ব্যয়ে দু'টি স্স্নুইস গেট নির্মাণ করা হয়। এলজিইডির ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প থেকে নির্মাণ করা হয়েছে এসব স্স্নুইস গেট। একই সময় খালের কিছু অংশ পুনর্খনন করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত খনন না হওয়ায় স্স্নুইস গেটগুলো এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না।
জুগিরগোফা গ্রামের কৃষক আশাদুল ইসলাম জানান, মুন্দাইল খাল পুনর্খনন ঠিকভাবে না হওয়ায় পানি থাকে না। খালটি ফের পুনর্খনন করা হলে এখানে সেচে ও দেশীয় মাছের আধার হতে পারে। রাইপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক ইছার উদ্দীন জানান, মুন্দাইল খালে স্স্নুইস গেট নির্মাণ করায় তার ও আশপাশের কৃষকদের জমির ক্ষতি হয়েছে। সুবিধার কথা বিবেচনা করে জমির ফসলের কথা চিন্তা করা হয়নি। কিন্তু খালে পানি না থাকায় স্স্নুইস গেট কোনো কাজে আসছে না। তাছাড়া সংরক্ষণের অভাবে যন্ত্রপাতি বিকল ও চুরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে নাগদার খালের দু'টি স্স্নুইস গেটের কপাট ও লোহার রডসহ অন্যান্য মালামাল চুরি হয়ে গেছে।
এলাকার বিভিন্ন কৃষক ও সচেতন মানুষ জানান, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়াই স্স্নুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। কিন্তু তা উপকারে আসছে না। এখনো মেহেরপুর জেলার মাঠেঘাটে খালবিলে দেশীয় মাছ দেখা যায়। খাল-বিল ও নদী-নালা পুনর্খনন করা হলে দেশীয় মাছ দিয়েই এলাকার মানুষের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করা সম্ভব। তাছাড়া পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা না থাকায় জলজপ্রাণী হুমকির মুখে। ধ্বংসের মুখে জীববৈচিত্র্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিইডি গাংনী উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ বলেন, 'স্স্নুইস গেট নির্মাণের সময় আমি এখানে ছিলাম না। সম্প্রতি যোগদান করেছি। সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।'
এ বিষয়ে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের সংসদ সদস্য সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, 'এলাকার সব নদ-নদী ও জলাধার পুনর্খননের জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেছি। ইতোমধ্যে ছেউটিয়া নদীর ১০ কিলোমিটার পুনর্খনন শুরু হয়েছে। অচিরেই কাজলা নদী পুনর্খনন শুরু হবে।'
তবে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।