বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

'গলা কেটে হত্যা করে লাশ কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দেয়'

হৃদয় হত্যা
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
'গলা কেটে হত্যা করে লাশ কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দেয়'

'মুরগিকে পর্যাপ্ত খাবার না দিয়ে বিক্রি করে দিত খামারে কর্মরত নৃ-গোষ্ঠীর শ্রমিকরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ করেন পোল্ট্রি খামারের ম্যানেজার শিবলী সাদিক হৃদয় (১৯)। এ কারণে খামারে কর্মরত ওই শ্রমিকদের সঙ্গে কয়েক দফা বাগবিতন্ডাও হয় তার। তখন থেকে শ্রমিকরা সিদ্ধান্ত নেয় হৃদয়কে উচিত শিক্ষা দেবে। আর উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য তাকে খামার থেকে অপহরণ করে চট্টগ্রামের রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড়ে নিয়ে যান। সেখানে গলা কেটে হত্যা করে লাশ কলাপাতা দিয়ে ডেকে দেয়। লাশ যাতে শনাক্ত না হয়, এ জন্য ছুরি দিয়ে শরীর থেকে মাংস পৃথক করে ফেলে দেয়।'

রোববার সকালের্ যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। নৃশংস এই হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া যুবক উচিংথোয়াই মারমা ও তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে শনিবার গ্রেপ্তারের পর তারার্ যাবকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতের্ যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

র্

যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, 'হৃদয়কে হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে উচিংথোয়াই মারমাকে শনিবার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে ও তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাসাই অং চৌধুরীকে নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।'

'হৃদয় তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য লেখাপড়ার পাশাপাশি রাউজান উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নে একটি পোল্ট্রি খামারে ম্যানেজারের কাজ করত। একই খামারে ৫-৭ জন সহযোগী কর্মচারীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় বাগবিতন্ডা হয়। পরে এ বিষয়ে খামার মালিকরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিলেও তার সহযোগীদের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা থেকে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য ২৮ আগস্ট রাতে উমংচিং মারমার নেতৃত্বে হৃদয়কে অপহরণ করা হয়। ওই রাতেই ভুক্তভোগীকে দিয়ে তার বাবার কাছে কল করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। একপর্যায়ে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হৃদয়ের অভিভাবকরা রাজি হন। পরে ১ সেপ্টেম্বর তার বাবা ও নানা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে বান্দরবানে যান।'

র?্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, 'সেখানে মুক্তিপণের দুই লাখ টাকা দেওয়ার পর অপহরণকারীরা জানায়, হৃদয় নিজে নিজে বাসায় চলে যাবে। মুক্তিপণ দেওয়ার পরও ৫-৬ দিনেও হৃদয় আর ফেরত না আসায় তার মা গত ৭ সেপ্টেম্বর রাউজান থানায় ছয়জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা করেন। এরপর রাউজান থানা পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তারা আদালতে উমংচিং মারমার নেতৃত্বে শিবলীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয় বলে জানায়।'

র্

যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, 'গ্রেপ্তার উচিংথোয়াই মারমা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হৃদয়কে অপহরণের এক দিন পর ২৯ আগস্ট বিকালে রঙিন পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে হত্যা করা হয়। উচিংথোয়াই মারমা নিজেই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। তার সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরেন। হত্যায় তিনটি পার্ট ছিল। এর মধ্যে অপহরণ গ্রম্নপ, কিলিং গ্রম্নপ এবং লাশ গুম গ্রম্নপ। অপহরণের সঙ্গে জড়িত ছিল শুধুমাত্র যারা খামারে কাজ করত। এর মধ্যে উমংচিং মারমা এবং অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে। উচিংথোয়াই মারমা এবং তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে কাজ আছে বলে ডেকে আনে। তাদের দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। এরপর মাথাসহ শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।'

তিনি বলেন, 'হৃদয়কে হত্যার পর উচিংথোয়াই মারমার মোবাইল থেকে হৃদয়ের বাবা-মাকে ২৯ আগস্ট কল করে মুক্তিপণের টাকা বান্দরবানে নিয়ে আসতে বলে। ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে গিয়ে হৃদয়ের পরিবার মুক্তিপণের টাকা দিয়ে আসে। এর মধ্যে উচিংথোয়াই মারমা নিজেই দেড় লাখ টাকা রেখে দেয়। বাকিদের ৫০ হাজার টাকা দেন।'

র্

যাবকে লাশ গুমের বিষয়ে গ্রেপ্তার জানায়, পাহাড়ে হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে কলাপাতা দিয়ে ডেকে দেওয়া হয়। পরে লাশটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন শনাক্ত করতে না পারে, এ জন্য টুকরো করা হয় এবং শরীরের মাংস আলাদা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সব মিলিয়ে ৯-১০ জন অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যের্ যাব দুইজন এবং রাউজান থানা পুলিশ আরও ছয়জনসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের্ যাব-৭ এর অধিনায়ক বলেন, 'হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলেছে- এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা জানে না। তবে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটি সত্য। তবে মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।'

উলেস্নখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর সকালে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড় থেকে হৃদয়ের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উমংচিং মারমা নামে গ্রেপ্তার এক অপহরণকারীর দেখানো মতে পাহাড়ি এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এদিকে লাশ নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের কাছ থেকে ঘটনায় জড়িত আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নেয়। পরে উত্তেজিত গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে তার মৃতু্য হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে