বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১

রংপুরে বাড়ছে বায়ু ও শব্দদূষণ

পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে পাট, কাগজ, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে ক্রেতা ও ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে বলে মনে করে সচেতন মহল
আবেদুল হাফিজ, রংপুর
  ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রংপুরে বাড়ছে বায়ু ও শব্দদূষণ

রংপুরে মাত্রাতিরিক্ত বায়ু ও শব্দদূষণ বাড়ছে। বিশেষ করে জ্বালানি, শিল্পকারখানা, দহন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ইটভাটার কালো ধোঁয়া, ঘন ঘন রাস্তা খনন, ড্রেনের ময়লা রাস্তার পাশে ফেলে রাখা, যানবাহন থেকে নির্গত ক্ষতিকারক অক্সাইড প্রতিনিয়তই দূষিত করছে বায়ু। সব মিলিয়ে বায়ুদূষণের ফলে নাক-মুখ জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাবসহ নানান রোগ মানবদেহে বাসা বাঁধছে। এ থেকে উত্তোরণে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক অভিযান পরিচালিত হলেও কাজের কাজ তেমন একটা হচ্ছে না।

রংপুর সিটি করপোরেশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন ১০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়ে থাকে। বাকি ৩০ থেকে ৩৫ টন বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয় না। এসব বর্জ্য পচে-গলে দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে মারাত্মক বায়ুদূষণে পরিণত হচ্ছে। বর্জ্যগুলো হোটেল ও রেস্টুরেন্টের আবর্জনা, শিল্পকারখানা হতে উৎপাদিত আবর্জনা, রান্নাঘরের পরিত্যক্ত আবর্জনা, হাটবাজারের পচনশীল শাকসবজি, কসাইখানার রক্ত অন্যতম উৎস বলে জানা গেছে। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা উন্মুক্তভাবে ফেলে রাখার ফলে তা বাতাস ও মাটি দূষিত হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ফলে আশপাশের দুর্গন্ধের পাশাপাশি দেখা যায় মশা, মাছি ও পোকামাকড়ের মাত্রাতিরিক্ত উপদ্রব। বর্ষা মৌসুমে বর্জ্যগুলোর অবস্থা হয়ে থাকে আরও ভয়াবহ। পস্নাস্টিক ও পলিথিনে দূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কথা হলেও এর দূষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত রংপুরসহ আশপাশ এলাকায় লাখ লাখ পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে অভিযান চললেও পস্নাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করতে পাট, কাগজ, কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহারে ক্রেতা ও ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে বলে মনে করে সচেতন মহল। নদীতে বর্ষা মৌসুমে সময়মতো বর্জ্য অপসারণ না করায় বর্জ্যসমূহে দ্রম্নত পচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। রংপুর সিটি করপোরেশনের ৬টি নদ-নদীসহ জেলায় ৫০টির বেশি নদীতে বর্জ্যগুলো পচে গিয়ে তরল, দুর্গন্ধযুক্ত রস তৈরি হয়ে পানিতে মিশছে। এতে করে পানিবাহিত রোগ বাড়াছে। এছাড়াও ইটভাটা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অবাধে গাছ কেটে পরিবেশের ক্ষতি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, শব্দদূষণের কারণে বয়স্ক মানুষসহ অনেকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে বাচ্চাদের সমস্যা হয় বেশি।

একাধিক সূত্র জানায়, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবল শব্দে কথা বলতে পারে। আবার তারা ৭০ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ গ্রহণ করতে পারে। ৮০ ডেসিবলের বেশি গেলেই ক্ষতি শুরু হয়। রাস্তায় বাস-ট্রাক থেকে শুরু বিভিন্ন যানবাহনের হর্ন প্রায় ৮০ থেকে ১০০ ডেসিবল শব্দ ছাড়িয়ে যায়। মাইক ব্যবহারে শব্দ ৮০ থেকে ১০০ ডেসিবল ছাড়িয়ে যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালার আওতায় নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকা চিহ্নিত করে রংপুরে শব্দদূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। আইন অমান্য করলে তার আইনি ব্যবস্থা রয়েছে।

রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন বলেন, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ রোধে প্রায়ই অভিযান পরিচালিত করা হচ্ছে। শব্দ ও বায়ুদূষণের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া শব্দদূষণের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে