টিআইবি বিএনপির ভাষায় কথা বলে- এমন মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, টিআইবি হচ্ছে বিএনপির দালাল। তাদের প্রত্যেকটা কথা একপেশে, তারা ওকালতি করে। তারা সরকারবিরোধী। যে ভাষায় বিএনপি কথা বলে, সেই ভাষায় তারা কথা বলে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি এই মন্তব্য করেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে 'একপাক্ষিক ও পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ' অ্যাখ্যা দেওয়া দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থাটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'ইতিহাস থেকে উপলব্ধি করেছি, টিআইবি সবসময় আওয়ামী লীগবিরোধী ছিল। সবসময় বিএনপির পক্ষপাত করে। তাদের গবেষণা তাদের বিষয়। তাদের গবেষণায় নিরপেক্ষতা আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। টিআইবি বলেছিল পদ্মা সেতু অসম্ভব। সিপিডিও একই মন্তব্য করেছিল।'
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন 'অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক' হয়নি মন্তব্য করে বুধবার টিআইবির এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, 'প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তিসহ এই নির্বাচনের সার্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনিসংকেত; গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ও স্বপ্নের সাথে সাংঘর্ষিক।'
নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা-বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'রাজনীতিতে রণকৌশল থাকবেই। আমাদের দ্বন্দ্ব-কোন্দল আছে, থাকবেই। সব দলেই আছে। রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব থাকবেই। এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। যেখানে যত সমস্যাই থাকুক, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সবাই এক।'
জাতীয় নির্বাচনের পরপর যে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তাতে দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচনের পর ৩০ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের প্রথম অধিবেশন বসছে। ফলে সংসদে বিরোধী দল কারা হচ্ছেন- জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, 'বিরোধী দল হবে কারা, সংসদ চালু হলেই বোঝা যাবে। সংসদ বসলেই দেখতে পাবেন কারা সংসদের বিরোধী দল।'
দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নতুন সরকার 'বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে' দাবি করে আওয়ামী লীগ নাধারণ সম্পাদক বলেন, 'এজন্য শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, পারভীন
জামান কল্পনা, মেরিনা জাহান কবিতা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
রিজভীর কথা পরিশীলিতভাবে পরিবেশন করেছে টিআইবি
এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে 'রিজভীর কথা পরিশীলিতভাবে পরিবেশন করেছে টিআইবি'- বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে টিআইবির বক্তব্য এবং সমসাময়িক ইসু্যতে করা সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'টিআইবির একটি রিপোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। টিআইবি সবসময় গবেষণালব্ধ রিপোর্ট বলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে টিআইবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো গবেষণা না করে কিছু শ্যালো বিষয়, কিছু পত্রিকার রিপোর্ট এবং তড়িঘড়ি করে কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে প্রেস ব্রিফিং করে। গতকালেরটাও আমার কাছে সেরকম মনে হয়েছে। বিএনপির ভাষা আর টিআইবির ভাষা মিলে গেছে। রিজভী (বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব) প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে যে কথাগুলো বলে সেগুলোকে একটু পরিশীলিতভাবে টিআইবি পরিবেশন করেছে।'
নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, 'দেশে প্রকৃতপক্ষে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের প্রশংসা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পর্যবেক্ষক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আসা পর্যবেক্ষক, ওআইসিভুক্ত-সার্কভুক্ত-কমনওয়েলথভুক্ত দেশ থেকে যারা এসেছিল সবাই।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের পর সবাই প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। পৃথিবীর শক্তিধর দেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশ নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার এবং সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।'
টিআইবির সমালোচনা করলেও প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, 'একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে সেটিকে মস্নান করতে টিআইবি রিপোর্টটা দিয়েছে। টিআইবির মতো প্রতিষ্ঠান দরকার আছে। সিভিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠানগুলো যারা সরকারের ভুলত্রম্নটি উপস্থাপন করে, সরকারের সমালোচনা করে আমরা সেগুলোকে সমাদৃত করার সংস্কৃতিটাই লালন করি। কিন্তু যখন রিপোর্ট যায় কারও পক্ষ হয়ে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তখন সেটি রাষ্ট্র, সমাজ ও সরকার কারো উপকারে আসে না; সেটি বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর মুখপাত্র হয়ে দাঁড়ায়।'
টিআইবি যেন বিশেষ কোনো গোষ্ঠী কিংবা নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির কিংবা গণতন্ত্রবিরোধী কোনো শক্তির মুখপাত্র না হয় তেমনটা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন মন্ত্রী।
টিআইবিকে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নোটিশ করা হবে কিনা- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তার জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমরা আশা করব, টিআইবি নিজেরা নিজেদের সংগঠনের যে মর্যাদা, সংগঠন সম্পর্কে যে ধারণা মানুষ আগে পোষণ করত সেখান থেকে সরে এসে কারও মুখপাত্র যেন না হয়। নির্বাচনবিরোধী অপশক্তির কিংবা গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ না করে সেটি আমাদের কামনা।'
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্ক?রের আমন্ত্রণে নয়াদিলিস্ন সফরে যাচ্ছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর এ?টি তার প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, 'আমি ভারত সফরে যাচ্ছি আগামী ৭ ফেব্রম্নয়ারি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সেখানে যাব। সম্ভবত সফরটা ৩ দিনের জন্য। এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে ৭ ফেব্রম্নয়ারি যাচ্ছি।'
দিলিস্ন সফরে আলোচনায় কোনো বিষয়গুলো থাকবে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, এখনো রেডি (প্রস্তুত) হয়নি। ওই সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সাক্ষাতের বিষয়টি এখনো ঠিক হয়নি বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বুধবার একটি ফ্লাইটে ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। তবে আবহাওয়াজনিত কারণে শেষ পর্যন্ত উগান্ডায় যাওয়া হয়নি মন্ত্রীর।
প্রসঙ্গত, কাম্পালায় ন্যাম সম্মেলনের ফাঁকে বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের কথা ছিল হাছান মাহমুদের। আবহাওয়াজনিত কারণে উগান্ডায় যেতে না পারায় আজ আর বৈঠকটি হয়নি।
নির্বাচন নিয়ে টিআইবির রিপোর্ট অসত্য : তথ্য প্রতিমন্ত্রী
অন্যদিকে, নির্বাচনে নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) রিপোর্ট অসত্য বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। তিনি বলেছেন, তাদের তথ্য গোজামিলে ভরা ও বিভ্রান্তিকর।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী চ্যালেঞ্জ করে বলেন, 'আন্তর্জাতিক কোনো জার্নাল তাদের এই গবেষণা প্রকাশ করবে না। যদি প্রকাশ করে তাহলে প্রমাণ হবে তাদের এই গবেষণা সঠিক। এই গবেষণায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড বজায় রাখা হয়নি।'
তিনি বলেন, 'তারা মানুষের মতামতকে তথ্য হিসেবে দেখিয়েছে। ৪২ হাজার কেন্দ্র থেকে মাত্র ৫০টি কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে পুরো নির্বাচন ঘিরে তৈরি রিপোর্ট কখনো সঠিক হতে পারে না।'
তথ্য প্রতিমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন- এত অল্প কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণ করে কী করে এমন রিপোর্ট প্রকাশ করা সম্ভব?