শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
মূলহোতাসহ চক্রের পাঁচজন গ্রেপ্তার

যাত্রীবেশে উঠে সর্বস্ব লুটে নেয় 'মামা পার্টি'

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
'মামা পার্টি'র মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা। ছবিটি মঙ্গলবারর্ যাবের মিডিয়া সেন্টার থেকে তোলা -যাযাদি

'ওরা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে যাত্রী সেজে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচিত রুটের ১-২ কিলোমিটার পরপর যাত্রী বেশে অবস্থান নিতেন। এরপর নির্জন স্থানে গাড়ি থামিয়ে অস্ত্র ও চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে যাত্রীদের অজ্ঞান করে মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিতেন।'

মঙ্গলবার দুপুরের্ যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্(যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানর্ যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন।

তিনি জানান, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসে যাত্রী সেজে উঠে চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে অজ্ঞান করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামা পার্টির মূলহোতাসহ অজ্ঞান পার্টি চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রানা ওরফে মো. শাহীন ওরফে শাহীন রানা (৪৯), মো. মফিজুল ইসলাম ওরফে মো. ইসলাম ওরফে ইসলাম মিয়া (৪৮), মো. সাগর ওরফে হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে মো. হাবিব (৫১), মো. ফারুক আহমদ ওরফে মো. ফারুক মিয়া ওরফে মো. ফারুক (৩৪) ও মো. আবুল কালাম (৫৩)।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, গত বছরের ২৬ জুন ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা এলাকায় মো. শাহিন রানা ওরফে তজ্জম ও মফিজুল ইসলাম ওরফে ইসলামসহ অন্যান্য আসামিরা যাত্রী সেজে সাদ্দাম শেখ নামের একজন ইজিবাইক চালকের ইজিবাইকটি ভাড়া করেন। তারা ইজিবাইকচালক সাদ্দামকে মারধর করে এবং একপর্যায় চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে অচেতন করে একটি মেহগনি বাগানে ফেলে রেখে ইজিবাইকটি ছিনতাই করে পালিয়ে যান।

পরে ওইদিন আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভুক্তভোগী সাদ্দাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃতু্যবরণ করেন। এছাড়া, আসামিরা নিহতের পরিবারের কাছে ছিনতাই করা ইজিবাইকটি ফেরত দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।

তিনি বলেন, হত্যার ঘটনা তদন্তকালে মামা পার্টি চক্রটি সম্পর্কে জানা যায়। এই মামা পার্টির মূলহোতা শাহিন রানা ওরফে তজ্জম এবং এ পার্টির সক্রিয় সদস্য ১০ জন।

র?্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, মামা পার্টি খ্যাত একটি ছিনতাইকারী চক্র দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর ও মাদারীপুরসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাত্রী সেজে চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে ছিনতাইসহ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সর্বস্ব লুট করে আসছিল।

সোমবার মাঝরাতের্ যাব-১০ এর একটি দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনিরআখড়া এলাকায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে মামা পার্টি খ্যাত ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি হাইস গাড়ি ও একটি করোলা প্রাইভেটকার, একটি হাতকড়া, চেতনানাশক ওষুধ (চার পাতার মোট ৪০টি), দুটি সুইচ গিয়ার চাকু, দুটি স্টিলের চাকু, একটি ক্ষুর, ছয়টি পুরাতন টাচ মোবাইল ফোন, পাঁচটি পুরাতন বাটন মোবাইল ও নগদ এক হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গ্রেপ্তার শাহিন রানা চক্রটির মূল পরিকল্পনাকারী এবং তার নেতৃত্বে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া করে যাত্রী সেজে চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে ছিনতাই করে আসছিল। তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে তারা ছিনতাইয়ের জন্য উপযুক্ত ও নির্জন রুট সিলেক্ট করতেন। এক্ষেত্রে তারা রাত ৩টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে যেকোনো সময় এ নির্জন রুট বেছে নিতেন।

তারপর কখনো মফিজুলের প্রাইভেটকার ব্যবহার করতেন। আবার কখনো মফিজুলের মাধ্যমে অন্য কোনো প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভাড়া নিতেন। এরপর মফিজুল এসব গাড়ি চালাতেন এবং শাহিন যাত্রী সেজে মফিজুলের পাশে বসে থাকতেন। অন্যরা তাদের পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচিত রুটের ১-২ কিলোমিটার পরপর যাত্রী বেশে অবস্থান করতেন।

পরবর্তী সময়ে সবাই একত্রিত হওয়ার পর যাত্রীদের কখনো দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মারধর করে আবার কখনো চেতনানাশক ব্যবহার করে অচেতন করে সবকিছু লুট করে তাদের সুবিধাজনক নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যেতেন।

গ্রেপ্তার শাহিন রানা ওরফে তজ্জম মামা পার্টি চক্রটির দলনেতা। শাহিন ২০০০ সালে একটি চুরির মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে পাঁচ বছর কারাভোগ করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার মফিজুল ইসলাম ওরফে ইসলাম পেশায় একজন ড্রাইভার। তিনি বিভিন্ন কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির গাড়ি ভাড়া করে অপরাধ করে আসছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি মলম পার্টি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক মামলাসহ তিনটি মামলা রয়েছে।?

গ্রেপ্তার সাগর ওরফে হাবিবুর রহমান শেখ ওরফে হাবিব রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ড্রাইভার হিসেবে কাজ করতেন। পেশার আড়ালে তিনি মামা পার্টির সক্রিয় সদস্য হিসেবে জড়িত ছিলেন। তিনি যাত্রীদের চেতনানাশক ব্যবহার করে ও দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছে থাকা বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতেন। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যা চেষ্টাসহ চারটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার ফারুক আহমদ ওরফে ফারুক মিয়া ওরফে ফারুক রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় রেন্ট-এ কারের গাড়ি চালাতেন। পেশার আড়ালে তিনি রাজধানীর সাইনবোর্ড ও কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভোর রাতে যাত্রীদের গাড়িতে তুলে বিভিন্ন মলম, চেতনানাশক ব্যবহার করে ও দেশীয় অস্ত্রে ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের কাছে থাকা বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই ও ডাকাতির দুটি মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার আবুল কালাম পেশায় গাড়িচালক। পেশার আড়ালে তিনি রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যাত্রীবাহী গাড়িতে উঠে জুস, চিপসসহ বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে যাত্রীদের অচেতন করে তাদের কাছে থাকা টাকা ও মোবাইলসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করতেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় একটি ছিনতাই মামলা রয়েছে বলেও জানান র?্যাব-১০ এর অধিনায়ক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে