শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল বিক্রির টাকার দ্বন্দ্বে পিয়াসকে হত্যা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামি মো. খালিদ হাসান, মো. আরিফ হোসেন এবং মো. মেহেদী হাসান মিরাজ। ছবিটি সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারর্ যাবের মিডিয়া সেন্টার থেকে তোলা -যাযাদি

মোবাইল বিক্রির টাকা পরিশোধের দ্বন্দ্বে রাজধানীর উত্তর মুগদায় কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূরকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যতম প্রধান তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছের্ যাব। তারা হলেন মো. খালিদ হাসান (১৮), মো. আরিফ হোসেন (২১) এবং মো. মেহেদী হাসান মিরাজ (২০)।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারর্ যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানর্ যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গত ৭ মার্চ রাতে রাজধানীর উত্তর মুগদা এলাকায় একটি পুরনো মোবাইল ফোন বিক্রির টাকা পরিশোধের দ্বন্দ্বে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী পিয়াস ইকবাল নূর এবং শামীম হোসেনকে নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন তাদের গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনার পরদিন নিহত পিয়াসের বাবা বাদী হয়ে মুগদা থানায় ৬ জনকে আসামি করে এবং কয়েকজন অজ্ঞাতনামা উলেস্নখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

কমান্ডার মঈন আরও বলেন, নৃশংস এই হত্যাকান্ডটি ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়।র্ যাব এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায়র্ যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর মুগদা এবং মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত অন্যতম প্রধান তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ৩ জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, এ হত্যা মামলার প্রধান আসামি আমির উদ্দিন আহমেদ অনিক চোরাই মোবাইল ফোন কেনাবেচার ব্যবসা করতেন। গত ১৮ ফেব্রম্নয়ারি অনিকের কাছ থেকে নিহত পিয়াসের বন্ধু মাহির ৪ হাজার ৩০০ টাকা বাকিতে একটি চোরাই মোবাইল ফোন কেনেন। ক্রয়কৃত মোবাইলের টাকা ২৫ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও মাহির আর্থিক সমস্যার কারণে তা পরিশোধ করতে পারেননি। যথাসময়ে টাকা পরিশোধ না করায় অনিক তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে গত ৭ মার্চ সন্ধ্যায় অনিক গ্রেপ্তার খালিদ, আরিফ, মিরাজ এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত আসামি অর্নব এবং রাব্বীকে নিয়ে মোবাইল বিক্রির বাকি টাকা আদায়ের জন্য মাহিরের বাসায় যান।

র্

যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, তারা মাহিরকে বাসায় না পেয়ে তার মায়ের কাছে মোবাইল বিক্রির পাওনা টাকা দাবি করেন এবং অশোভনীয় আচরণ করেন। মাহিরের মা একদিন পর টাকা পরিশোধ করে দেবেন বলে তাদের জানিয়ে দেন। টাকা পরিশোধের আশ্বাস পেয়ে তারা মাহিরের বাসা থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে মাহির বাড়িতে এসে তার মায়ের কাছে ঘটনা জানতে পারেন। বিষয়টি মাহির তার বন্ধু নিহত পিয়াস ও আহত শামীমকে জানান।

পিয়াস ও শামীম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য ঘটনার দিন সন্ধ্যায় অনিকের সঙ্গে উত্তর মুগদা এলাকায় অনিকের আড্ডার পয়েন্টে দেখা করেন। এ সময় অনিক, পিয়াস এবং শামীমকে তুই তুকারি সম্বোধন করেন। পরবর্তীতে একই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে পিয়াস অনিককে ফোন দিয়ে লিটল এনজেল স্কুলের গলিতে পুনরায় আসতে বলেন। অনিক সেখানে পৌঁছালে পিয়াস এবং শামীম অনিকের কাছে কেন তাদের তুই তুকারি সম্বোধন করেছিল তার ব্যাখ্যা চান।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, আগে থেকেই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, গ্রম্নপিং এবং সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব থাকায় তাদের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ সময় তাদের মধ্যে বাগ্‌বিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অনিক পিয়াস ও শামীমকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তারদের ফোন করে সেখানে আসতে বলেন। অনিকের ফোন পেয়ে অনিকের বন্ধু গ্রেপ্তার খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ মামলার অপর আসামি অর্নব মোটর সাইকেলযোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং গ্রেপ্তার খালিদ পার্শ্ববর্তী একটি গ্যারেজ থেকে বেসবল খেলার স্টিক নিয়ে আসেন। এ সময় তারা বেসবল খেলার স্টিক ও লাঠি দিয়ে পিয়াস ও শামীমকে নৃশংসভাবে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে মামলার অপর আসামি রাব্বী একটি দোকান থেকে আচমকা জোর করে একটি নতুন ধারালো ছুরি নিয়ে পিয়াসের পিঠের ডান পাশে এবং শামীমের ডান কাঁধে আঘাত করলে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

তিনি আরও বলেন, এ সময় শামীম মাটিতে লুটিয়ে পড়লে গ্রেপ্তার খালিদ, আরিফ, মিরাজসহ অন্যরা শামীমকে আবারও শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকেন। পিয়াস এবং শামীমের চিৎকারে লোকজন জড়ো হলে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন আহতদের মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিয়াসকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে