মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
ডেমরায় গোডাউনে আগুন

ধ্বংসস্তূপে খুঁজে ফিরছেন অবশিষ্ট মালামাল

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

'সব তো পুড়েই গেছে, কিছুই তো আর নাই। এখন দু-চারটে জিনিস যেগুলা ঠিকঠাক আছে সেগুলা সরিয়ে নিচ্ছি। এতে তো আর আমাদের ক্ষতির কোনো পূরণ হবে না'- শুক্রবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ডেমরার ভাঙ্গাপ্রেসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী সুমন এভাবেই তার হতাশা ব্যক্ত করছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টায় ভাঙ্গাপ্রেস এলাকার ক্রীড়াসামগ্রীর একটি গোডাউনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে পৌঁছায় ঘটনাস্থলে। এরপর ডেমরা, পোস্তগোলা ও সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশন থেকে মোট ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। শুক্রবার সকাল ৮টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুনের তীব্রতা কমে আসার পর ফায়ার সার্ভিস ও ব্যবসায়ীরা একত্রে ভেতর থেকে পুড়ে যাওয়া মালামালগুলো বের করতে থাকেন। অধিকাংশ পণ্য পুড়ে গেলেও অল্প কিছু পণ্য আগুনের কবল থেকে রক্ষা পায়। সেসব পণ্যই বসে বসে আলাদা করছিলেন সুমন।

তিনি বলেন, 'যেসব পণ্য অবশিষ্ট সেগুলো আলাদা করে নিয়ে যাচ্ছি। যদিও তার পরিমাণ খুব কম। আমার প্রায় কয়েক কোটি

টাকার মালামাল ছিল এই গোডাউনে। সব শেষ হয়ে গেল।'

একইভাবে মালামাল সরাচ্ছিলেন আরেক কর্মী বিলস্নাল। তিনি বলেন, 'স্টেডিয়ামে আমার মালিকের দোকান। গোডাউনেই সব মালামাল রাখা হতো। কিন্তু এভাবে সব পুড়ে যাওয়ার পর মালিক বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। এই বিশাল ক্ষতি তো সামলানো সম্ভব না। যেসব মাল পোড়েনি, সেগুলো নিয়ে যাচ্ছি।'

অন্যদিকে ব্যবসায়ীর বলছেন, এই অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৫০ কোটি টাকা।

যে কোনো সময় ভেঙে

পড়তে পারে ভবনটি

ডেমরার ভাঙ্গাপ্রেস এলাকায় অগ্নিকান্ডের শিকার ভবনটি ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ভবনের যে অবকাঠামোগত শক্তি সেটা আর নেই। একেবারে কমে গেছে। ভবনটির এক জায়গায় ছাদ ফেটে গেছে। যে কারণে যে কোনো সময় এটি ভেঙে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ইনসিডেন্ট কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিম এই তথ্য জানিয়েছেন।

শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে আগুনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।

ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, 'ভবনটি নির্মাণে কোনো ধরনের নীতিমালা মানা হয়নি। এখানে নেই ফায়ার এক্সিট, ভেতরে ঢোকার সিঁড়ি খুবই সংকীর্ণ। পাশের অন্য ভবন থেকে পানি দেওয়ার সুব্যবস্থাও নেই। কারণ ভবনগুলো সব লাগোয়া। ভবনটির নিচে নেই নিজস্ব কোনো ওয়াটার রিজার্ভ।'

তিনি বলেন, 'এখানকার ভবনগুলো পাশাপাশি, ঘন ঘন ও লাগোয়াভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। যেটি এখন জ্বলছে, তার ঠিক পূর্ব পাশের ভবনটিও লাগোয়া। একই দেয়াল, এক ইঞ্চিও ফাঁকা নাই। যে কারণে আমরা ভবনটির পূর্ব পাশ দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি দেওয়াসহ কোনো কাজই করতে পারিনি। ভবনটির নিচে যে ওয়াটার রিজার্ভ থাকার কথা ছিল সেটি আমরা পাইনি। শুধু তাই নয়, এই আগুন লাগা ভবনের আশপাশে যেসব ভবন রয়েছে সেখানেও আমরা পানির রিজার্ভ পাইনি। এসব কারণে আমাদের আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয়েছে।'

ভবনটি নিয়ম মেনে নির্মাণ বা নির্মাণের অনুমোদন ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা আগুন পুরোপুরি নির্বাপণের কাজকে গুরুত্ব দিয়েছি। পরে আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে জানাতে পারবো যে ভবনটি নির্মাণের ক্ষেত্রে আদৌ কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল কি না। আমরা ভবনটির গ্রিল ও দেয়াল কেটে জানালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মালামাল সরিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি। আমাদের কাছে যৎসামান্য থাকা পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েছি।'

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ডেমরার ভাঙ্গাপ্রেস এলাকায় চার তলা ওই ভবনের তিন তলায় আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল নৌবাহিনীও। আগুন লাগার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে