সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের ঝুঁকিতে পড়েছে পটুয়াখালী শহরের লোহালিয়া নদীর পূর্ব পাড়ের চরে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল বনভূমি। স্থানীয়দের কাছে এটি 'ছৌলাবাগান' হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, এ বনভূমি থেকে অবাধে গাছ কর্তন, নতুন গাছ সৃষ্টিতে বাধা প্রদানসহ কৃষিজমি দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। আর এ প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে অচিরেই বনভূমিটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদীরা।
স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকেই ধাপে ধাপে এই বাগানটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এক দশক আগে লোহালিয়া নদী কাঠপট্টি এলাকায় নদীর প্রশস্ততা ছিল ৪২৫ মিটার। তবে বর্তমানে সেখানে নদীর প্রশস্ততা কমে হয়েছে ১৫৩ মিটার। বাকি ২৭২ মিটার এলাকায় চর জেগে প্রাকৃতিক বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে লোহালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বনভূমিটি লোহালিয়া নদীর চরেই সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পুরো ছৌলাবাগানের আয়তন ১ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটার।
সূত্রে জানা যায়, লোহালিয়া নদীর চরে সৃষ্ট বনভূমিটি মূলত সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত জমি। এটি ইদ্রাকপুর লোহালিয়া এবং কেশবপুর মৌজার মধ্যে পড়েছে।
এদিকে বেশ কয়েকটি অসমর্থিত সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই চরের কিছু জমি ইতোমধ্যে কৃষিজমি দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকটি পক্ষ নদীর তীরে গড়ে ওঠা এ বনভূমির জমিকে কৃষিজমি দেখিয়েও বন্দোবস্ত নেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
সম্প্রতি ছৌলাবাগান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বনের অনেক স্থান থেকে গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে এমন চিহ্ন রয়েছে। বিশেষ করে গাছের গোড়াগুলো এখনো স্পস্ট। মূলত নির্দিষ্ট এলাকাকে কেন্দ্র করে গাছ কেটে সেখানে কৃষিজমি তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। একইভাবে লোহালিয়া ব্রিজের দুইপাড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে বসতবাড়িসহ কৃষিজমি। এ কারণে এই এলাকায় নতুন করে জন্ম নেওয়া ছৌলাগাছগুলো ছোট অবস্থাতেই কেটে ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে পটুয়াখালী বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, 'বনটি সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। এটি প্রকৃতির আশীর্বাদ, বিশেষ করে শহরের পাশে সাধারণত এমন বন দেখা যায় না। এটি শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে বনভূমিটি বনবিভাগের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় আমরা এটি সংরক্ষণে কাজ করতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করলে বনবিভাগ এটি সংরক্ষণ এবং পরিচর্যায় কাজ করতে পারবে।'
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূরকুতুবুল আলম বলেন, 'বন থেকে গাছ কেটে নেওয়ার বিষয় আমার জানা নেই, কিংবা এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কীভাবে বনটি সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করব।'
গত কয়েক বছর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে তীব্র দাবদাহের মতো বৈশ্বিক বিষয়গুলো। তবে এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে অধিক পরিমাণ বৃক্ষরোপণ আর সংরক্ষিত বনভূমির সংখ্যা বৃদ্ধিতেই সমাধানের পথ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এজন্য পটুয়াখালীর ছৌলাবাগান বনভূমি সংরক্ষণের দাবি জেলাবাসীর।