কারা অধিদপ্তরের প্রণীত প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন কারাসহকারী ও হিসাবরক্ষকরা। তাদের অভিযোগ, ১৯৮৪ সালের নিয়োগবিধি অনুযায়ী পূর্বে যেখানে পর্যায়ক্রমে ডেপুটি জেলার ও জেলার পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ ছিল, সেখানে ২০০৬ সালের বিধিমালায় তা সীমিত করে হিসাবরক্ষক পদে (গ্রেড-১৫) উন্নীত হওয়ার বিধান করা হয়।
কিন্তু ওই পদও সীমিত হওয়ায় শতাধিক কারাসহকারীর বিপরীতে মাত্র ৯% হিসাবরক্ষকের পদ বিদ্যমান থাকে, ফলে অধিকাংশ কর্মচারীর পেশাগত অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়।
২০১১ সালে নিয়োগবিধি সংশোধনের সময়ও এই পদবঞ্চনার বিষয়ে তারা সঠিকভাবে অবহিত ছিলেন না। সেই থেকে পদোন্নতির ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ ও হতাশা তাদের মধ্যে পুঞ্জিভূত হতে থাকে। সময়ান্তরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পদোন্নতির যৌক্তিক দাবি জানানো হলে, ভবিষ্যতে তা বিবেচনায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে নিয়োগবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলে আবারও দেখা দেয় নতুন বৈষম্য। কারা অধিদপ্তরের প্রস্তাবনায় কারাসহকারী ও অফিস সহকারী পদ দুটি একই গ্রেডে (গ্রেড-১৬) থাকলেও, অফিস সহকারীদের উচ্চমান সহকারী পদে (গ্রেড-১৪) উন্নীত করার প্রস্তাব রাখা হয়; বিপরীতে কারাসহকারীদের হিসাবরক্ষক পদে (গ্রেড-১৫) উন্নীত করার প্রস্তাব রাখা হয়। এতে কারাসহকারীরা একযোগে বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মতামত দেন।
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় হিসাবরক্ষক ও উচ্চমান সহকারী উভয় পদ ১৪তম গ্রেডে রাখার প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হলেও, পরে অজ্ঞাত কারণে হিসাবরক্ষক পদটি আবার ১৫তম গ্রেডে রাখা হয়। এতে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ফের ক্ষোভ দেখা দেয়।
কারাসহকারীদের দাবি, দেশে অধিকাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষক পদ ১২ থেকে ১৩তম গ্রেডে অবস্থান করে। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে হিসাবরক্ষক পদ রয়েছে ১১তম গ্রেডে। অথচ কারা অধিদপ্তরে সেই পদ ১৫তম গ্রেডে রাখা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অবিচার বলে তারা মনে করেন।
কারা সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকদের জন্য টাইপিং গতি নির্ধারিত থাকলেও অফিস সহকারী/কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকদের জন্য তেমন শর্ত নেই। একই যোগ্যতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আসা সত্ত্বেও অফিস সহকারীরা দ্রুত সময়ে উচ্চমান সহকারী (গ্রেড-১৪), প্রধান সহকারী (গ্রেড-১৩) এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা (গ্রেড-১১) পদে উন্নীত হন।
অথচ কারাসহকারীদের অনেকেই সারা চাকরি জীবনে মাত্র একবার হিসাবরক্ষক পদে উন্নীত হয়ে অবসরে যান।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এই আদেশ কার্যকর হলে কারা অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে বিদ্যমান বৈষম্যের অবসান ঘটবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, “নিয়োগবিধি সংশোধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিছু পদে বৈষম্য ও অসামঞ্জস্য আছে, যা দূরীকরণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান করতে সময় লাগবে,আমরা কাজ করছি। সরকার কর্তৃক অনুমোদনের পর এসব সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছি।”
কারাসহকারীরা দ্রুত এই বৈষম্য দূর করে, সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতির সুনিশ্চিত সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকারের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।