বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। এ আন্দোলনের প্রথম ধাপ অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ। আর দ্বিতীয় ধাপ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। যা এখনো অর্জন হয়নি। বিএনপি বিশ্বাস করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, সেটি সম্পন্ন হলে সত্যিকার জনগণের নির্বাচনে প্রতিনিধি দল যখন দেশের দায়িত্ব নেবে, তখন আন্দোলন সফলতা পাবে।
সোমবার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট বিপস্নবে আহত ছাত্র-জনতাকে আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন কাযর্ক্রমের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মঈন খান বলেন, ৫ আগস্টের পর জনগণ বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
দলের নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের ছিটেফোটাও নেই। তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়েছে। ভবিষ্যতেও যেন তাদের মুখোশ উন্মোচন থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের দোসররা যেন এ সরকারকে কবজা করতে না পারে। তারা যেন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে, এজন্য মুক্তিকামী ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিরোধ করতে হবে।
এদিকে, আবদুল মঈন খান জুলাই বিপস্নবে আহত হয়ে চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়া রোগীদের খোঁজ-খবর নেন এবং তাদের আর্থিক সহায়তা দেন। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালাম, চক্ষু বিজ্ঞানে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী, উপ-পরিচালক ডা. সোহেল, আহতদের চিকিৎসক জাকিয়া সুলতানা নীলা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
অন্তর্বর্তী সরকার ২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়: মেজর হাফিজ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এদেশের এক কৃতী সন্তান ড. ইউনূসকে (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এই সরকারের প্রধান কাজ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু দেখা গেল, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ'। তারা দীর্ঘদিন অর্থাৎ ২০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকতে চায়।
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ৭ই নভেম্বর আকাঙ্ক্ষা ও আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মেজর হাফিজ বলেন, মাঝেমধ্যে দুঃখবোধে আক্রান্ত হই, দু'দিন আগে- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বড় নেতা বলেছেন, একটা ভোট দেওয়ার জন্য দুই হাজার লোক জীবন দেয়নি। ভোট কী এতো সোজা? ভোট তো গণতন্ত্রের প্রতীক। ভোটের জন্যই তো '৭১ সালে লড়াই করেছি। '২৪-এর লড়াই তো হয়েছে বাকস্বাধীনতা ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আর নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান। আর এরা বলেন, নির্বাচনের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। তাহলে কিসের জন্য যুদ্ধ, এতো আত্মত্যাগ? ভোট কী এতোই হেলাফেলার বস্তু? অর্থাৎ এরা (বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন) গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে বিশ্বাসী নয়। তারা হয়তো ভাবে, দু-একটা মিছিল করলে দেশ ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আওয়ামী ঘরানার বিভিন্ন লোক ঢুকে গেছে। ছাত্ররা আমাদের সন্তান সমতুল্য, তাদের কর্মকান্ড দেখলে মনে হয়, দেশটা তারাই স্বাধীন করেছে। আর কেউ জীবন দেয়নি। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর হাজার নেতাকর্মী জীবন দিল, তাদের হিসাব-নিকাশ কে করবে?
হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ড. ইউনূসকে সরকারকে সমর্থন করি, ভবিষ্যতে করব। কিন্তু আপনারা আজীবন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। ১০ থেকে ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করবেন না। যারা আওয়ামী লীগের কুশীলব ছিলেন, ১৬ বছর ধরে হালুয়া-রুটি খেয়েছেন এবং সুবিধা নিয়েছেন- এরা এখনো বহালতবিয়তে আছে। এদের দ্রম্নত সরাতে হবে। এটি শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব বটে।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।