পার্বতীপুর বড়পুকুরিয়া খনির দুটি ইয়ার্ড প্রায় আড়াই লাখ টন কয়লায় পূর্ণ। কয়লা রাখার আর কোনো জায়গা নেই। পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট বিদু্যৎ কেন্দ্রে কয়লা ব্যবহার কম হওয়ায় এবং গত আগস্ট থেকে কয়লা উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানাভাবে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে কয়লা উত্তোলন।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে একদিকে ভূগর্ভে উৎপাদনশীল কোল ফেইসে গ্যাস নিঃসরণসহ কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বলনের আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) এবং চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় দ্রম্নত খনি ইয়ার্ড ফাঁকা করা কিংবা কয়লা রাখার নতুন জায়গা ঠিক করা নতুবা খোলা বাজারে কয়লা বিক্রি করা জরুরি। তা না হলে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দিতে হবে।
জানা গেছে, এই খনির ১৪১৪ কোল ফেইস থেকে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। গত ৩ আগস্ট থেকে এই ফেইসে উৎপাদন শুরু হয় এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উৎপাদন চলবে বলে খনি কর্তৃপক্ষ আশা করছে। গত অক্টোবর পর্যন্ত ১৪১৪নং ফেইস থেকে উত্তোলিত হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন কয়লা। ওই ফেইস থেকে আরও প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা উত্তোলিত হতে পারে। বিসিএমসিএল-এর ৩টি কোল ইয়ার্ড রয়েছে। এরমধ্যে একটিতে সেডিমেন্ট কোল রয়েছে। অন্য দুটি কোল ইয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ২ লাখ টন। বর্তমানে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ টন কয়লা মজুদ রয়েছে।
বড়পুকুরিয়া তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রের ৩ ইউনিটের মধ্যে একটি দীর্ঘদিন যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে বন্ধ আছে। পাশাপাশি তৃতীয় ইউনিট চলতি বছরের জুনের পর থেকে কয়েক দফা ত্রম্নটির কারণে বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী কয়লা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে খনির কয়লা ইয়াডে কয়লার মজুদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত খনি কর্তৃপক্ষ তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠানের কাছে কয়লা বিক্রি করত, কিন্তু ২০১৮ সালের জুলাই মাসের পর বড়পুকুরিয়া তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট চালু হওয়ায় খনি থেকে উত্তোলিত সব কয়লা এখানে বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্র চাহিদা অনুযায়ী কয়লা না নেওয়ায় মজুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
দ্রম্নত কয়লা নেওয়ার জন্য খনি কর্তৃপক্ষ অক্টোবর মাসের প্রথম দিন ও ২৩ অক্টোবর তাপ বিদু্যৎ কর্তৃপক্ষকে কয়লা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে ও বিভিন্ন সময়ে মৌখিকভাবেও জানানো হলেও বিদু্যৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী কয়লা সরবরাহ নিচ্ছে না।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইন কোম্পানি লিঃ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, 'খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা খনির কোল ইয়ার্ডে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে, কয়লা উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হবে। চলমান ১৪১৪ ফেইসের স্বাভাবিক কয়লা উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হলে বিসিএমসিএল এবং চীনা কনসোর্টিয়ামের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতিবন্ধকতাসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে। অপরদিকে ফেইসটিতে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণসহ কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বলনের আশংকা দেখা দিবে।'
এ বিষয়ে তাপ বিদু্যৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, 'বিদু্যৎ কেন্দ্রে দুটি ইউনিট যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে বন্ধ থাকায় কয়লার সরবরাহ কমেছে।'
তবে অল্প সময়ের মধ্যে সব ইউনিট চালু হলে এ সমস্যা থাকবে না বলে জানান এই কর্মকর্তা।