রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
দুই দিনের রিমান্ডে

আদালত প্রাঙ্গণে শহীদুল হককে দেখে ভুয়া ভুয়া স্স্নোগান, মারধরের চেষ্টা

যাযাদি ডেস্ক
  ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
আদালত প্রাঙ্গণে শহীদুল হককে দেখে ভুয়া ভুয়া স্স্নোগান, মারধরের চেষ্টা

কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলায় আটজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া দ্বিতীয় মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব একেএমজি কিবরিয়া মজুমদারের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার দুপুরে কুমিলস্নার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ফারহানা সুলতানা শুনানি শেষে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সোমবার বেলা ১১টায় কুমিলস্নার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা সুলতানার আদালতে ওই দুজনকে হাজির করা হয়। এর আগে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে তাদের কুমিলস্না কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়।

কুমিলস্না আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) কাইমুল হক বলেন, একেএম শহীদুল হক ও একেএমজি কিবরিয়া মজুমদারকে আদালতে হাজির করা হলে প্রথমে তাদের ৮ বাসযাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আদালত আবেদন গ্রহণ করে তাদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুজনকে ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ মামলায় জহিরুল ইসলাম নামে আরও একজনের দুই দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ২৭ নভেম্বরের মধ্যে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সরেজমিন দেখা যায়, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শহীদুল হক ও কিবরিয়া মজুমদারকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। বেলা ১১টা ৭ মিনিট থেকে ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত তারা আদালতের ভেতর ছিলেন। পরে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে আবার তাদের কুমিলস্না কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের আদালতে প্রবেশ ও বের করার সময় আইনজীবীসহ বিভিন্ন বিক্ষুব্ধ জনতা 'ভুয়া ভুয়া', 'আওয়ামী লীগের দালাল', 'শহীদুল হকের ফাঁসি চাই' প্রভৃতি স্স্নোগান দিতে থাকেন। বের করার সময় কয়েকজন তাদের কিলঘুষি মারার চেষ্টা করেন। পরে দ্রম্নত পুলিশ সদস্যরা তাদের প্রিজন ভ্যানে তুলে নিয়ে যান।

শহীদুল হকের পক্ষের আইনজীবী এএইচএম আবাদ হোসেন এবং একেএমজি কিবরিয়া মজুমদারের আইনজীবী জাকির হোসেন খান বলেন, 'হয়রানির উদ্দেশ্যে ও রাজনৈতিক কারণে তাদের এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অথচ মামলাটির সঙ্গে এই দুজনের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা আদালতে রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুরের দাবি জানিয়েছি। পরে আদালত তাদের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এ ঘটনায় আমরা পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি কাইমুল হক বলেন, 'এ ঘটনায় প্রথম মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুলস্নাহ মোহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে রুহুল কবির রিজভী, সালাউদ্দিন আহমেদ, মনিরুল হক চৌধুরীসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাদের ফাঁসানো হয়েছিল। শহীদুল হককে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বের হবে কারা নৃশংস এই হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা, অর্থদাতা, কোথা থেকে গানপাউডার আনা হয়েছিল। আমাদের মামলার আসামি কুমিলস্নার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তীসহ চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন এসআই এখনো চাকরি করছেন। তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।'

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি ভোরে বাসে পেট্রলবোমা মেরে ৮ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় গত ১১ সেপ্টেম্বর আবুল খায়ের নামে এক ব্যক্ত বাদী হয়ে কুমিলস্নার আদালতে মামলা করেন। এতে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক ও র?্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ, কুমিলস্নার তৎকালীন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী, থানার তৎকালীন ওসিসহ ১৩০ জনের নাম উলেস্নখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে পেট্রলবোমা হামলার শিকার বাসটি বাদীর তত্ত্বাবধানে চলত বলে দাবি করেছেন আবুল খায়ের। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জামমুড়া গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দিনের ছেলে। ওইদিন আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসিকে সরাসরি এফআইআরের (নথিভুক্ত) নির্দেশ দেন।

চৌদ্দগ্রাম থানার পুলিশ জানায়, গত ১২ অক্টোবর জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব একেএমজি কিবরিয়া মজুমদার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তিনি কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কোমরকড়া গ্রামের প্রয়াত মফিজ উদ্দিন আহম্মদ মজুমদারের ছেলে। তিনি সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের পিএস ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ঢাকায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

২০১৫ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি ভোরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের হরতাল-অবরোধ চলাকালে কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুর এলাকায় বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই সাতজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। এ ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে ৩ ফেব্রম্নয়ারি বিকালে ৫৬ জনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০ থেকে ৮০ জনের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে