বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন এক নির্বাচন। এই নির্বাচন হবে দেশের সবচেয়ে কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আমাদের প্রধান প্রতিপক্ষ দুর্বল মনে হতে পারে। তার মানে এই নয়, বিএনপি ক্ষমতায় চলে গেছে বা ক্ষমতায় যাচ্ছে। কারণ দীর্ঘদিনে মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়েছে। আমরা যদি কোনো ভুল করেও থাকি তাহলে নিজেদের সংশোধন করতে জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
সোমবার বিকালে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হলের তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি বিষয়ক বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এই কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'অনেক নেতাকর্মী মনে করছেন, আমরা এখনি ক্ষমতায় চলে গেছি, কিন্তু তা নয়। ক্ষমতায় যেতে হলে জনসমর্থন প্রয়োজন। জনগণের সমর্থন আমাদের আদায় করতে হবে। জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে। তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। নেতাদের চালচলনে মানুষ যেন কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।'
বিএনপির দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবের ৩১ দফা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'বিএনপি দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে বলেই ৩১ দফা দিয়েছে। আমরা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ৩১ দফা দিয়েছি। তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে আপনারা কাজ করবেন। জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে হবে। দেশের মানুষের সমর্থন আদায় করতে হবে।'
এক প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, 'একটি দেশকে শক্তিশালী করতে হলে প্রাইমারি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শিশুদের আদব-কায়দা শেখাতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দে দালান-কোঠা নির্মাণ কমিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের সমাজে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করা হবে। দুর্নীতি সামাজিকভাবে কমিয়ে আনতে হলে প্রাইমারি লেভেল থেকে তা করতে হবে। তারা যদি বাচ্চাদের শেখায় দুর্নীতি খারাপ, ভালো নয়, তা সমাজের জন্য ক্ষতিকর, তাহলে তা কমিয়ে আনতে অন্তত পাঁচ থেকে ১০ বছর লাগবে।'
আগামীতে কৃষকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, 'আমাদের দেশে চাঁদাবাজি আছে। তা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।'
বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড প্রবর্তনের ব্যবস্থা করবে বলে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহায়তা করা হবে। নারীর ক্ষমতায়নকে লক্ষ্য রেখে এই কার্ড হবে নারীদের নামে। তিনি যাতে এই ভর্তুকির মাধ্যমে নিজের সন্তানের স্বাস্থ্য ও সঞ্চয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন।'
খালেদা জিয়ার সময় কৃষকদের পাঁচ হাজার টাকা ঋণ মওকুফ এবং ২৫ বিঘা জমির খাজনা মওকুফের কথা তুলে ধরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'প্রত্যেক কৃষককে একটি করে কার্ড দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের সার, বীজ যেন তাদের কাছে পৌঁছায়। এক বিঘা জমি চাষ করতে যদি একজন কৃষককে ২০ হাজার টাকা সাপোর্ট দেওয়া যায় তাহলে তারা ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবে। এটা তাদের জন্য বড় পাওয়া হবে।'
এর আগে সকাল ৯টায় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
কর্মশালায় বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ঈসমাইল জবি উলস্নাহ, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিলস্নাত, বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেস আলী মামুন, আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, সাবেক সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার রানু, কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা হাবীবা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ডা. মাহাদী আমিন।
কর্মশালাটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহগণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য (দপ্তরে সংযুক্ত) আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী।
জনসম্পৃক্তি বিষয়ক বিভাগীয় এই কর্মশালায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধে?্য মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি, মাহমুদুল হাসান রুবেল, ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন, লাইলী বেগম, ড. শামছুজ্জামান মেহেদী, আরিফা জেসমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।