বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি

উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
  ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

দিনাজপুরের পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত কয়লার ওপর নির্ভর করে খনির পাশে প্রথমে ১২৫ মেগাওয়াট করে দুটি এবং পরে ২৭৫ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদু্যৎ ইউনিট স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদু্যৎ উত্তরাঞ্চলের কৃষিজমিতে সেচকাজ ও গোটা এলাকা আলোকিত করে। কিন্তু মাঝে মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রম্নটির কারণে বিদু্যৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ থাকছে। ফলে তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রটি আশানুরূপ কয়লা নিতে না পারায় বিপাকে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খনির ইয়ার্ডে জমে উঠেছে অতিরিক্ত কয়লা। এখন আর তিল ধারণেরও ঠাঁই নেই। এতে কয়লা উৎপাদন বন্ধসহ স্তূপে প্রজ্বালন ঘটার আশঙ্কাও রয়েছে। অন্যদিকে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হলে খনিতে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন খনিসংশ্লিষ্টরা।

খনি সূত্র অনুযায়ী, সক্ষমতা অনুযায়ী দৈনিক ৩৩০০ টন উৎপাদিত কয়লা বিদু্যৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হতো। কিন্তু বিদু্যৎকেন্দ্রের ১টি ইউনিট বন্ধ থাকার ফলে খনি ইয়ার্ডে কয়লা মজুত হতে শুরু করে। খনির সূচনাকাল থেকে কোনো সময়ই ইয়ার্ড খালি হয়নি। ফলে প্রকৃত মজুত কয়লার পরিমাণ নির্ণয় করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ২০০৫ সাল বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়ে এখনো চলমান। ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ খনি থেকে উৎপাদিত কয়লার ৬৫ ভাগই পাশের তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট কয়লা স্থানীয় ইটভাটা, স্টিল মিল ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়েছে।

তবে ২০১৯ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ঘাটতি দেখা দেওয়ার পর বিদু্যৎ ও জ্বালানি সম্পদ বিভাগ খনিতে গতিশীলতা আনার জন্য সাবেক মাইনিং বিশেষজ্ঞ-কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করে। সভায় সিস্টেম লস কারিগরি কমিটির মাধ্যমে নির্ণয় ও ভবিষ্যতে কয়লার মজুত নির্ণয়ের সময় একই হারে সিস্টেম লস সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হয়। আমাদের দেশে সিস্টেম লসের পরিমাণ ১-৩%। আর কয়লা সমৃদ্ধ দেশ ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন এবং ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ১-৮% সিস্টেম লস স্বীকৃত।

খনিতে কয়লা উৎপাদন শুরু হলে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত উৎপাদন ১ কোটি ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫.৩২ টন। পিডিবিতে সরবরাহ করা হয় ৬৬ লাখ ৯১ হাজার ৭২৩.৬১ টন, অন্য গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে ৩৩ লাখ ১৯ হাজার ২৮১.৩০ টন এবং কোম্পানির নিজস্ব বয়লারে ব্যবহার করা হয়েছে ১২ হাজার ৮৭.৩৪ টন। উৎপাদনের শুরু অর্থাৎ ২০০৫ সাল থেকে ৩১ জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩ বছরে মোট কারিগরি লস/সিস্টেম লস/ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯২ টন যা মোট উৎপাদিত কয়লার ১.৪২% এবং মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত সিস্টেম লস ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যে রয়েছে।

জানা যায়, খনির ১৪১৪ নম্বর ফেস থেকে চলতি বছরের ৩ আগস্ট কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। গত অক্টোবর পর্যন্ত এই ফেস থেকে কয়লা উত্তোলন হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার টন।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রতিদিন এই খনির অভ্যন্তর থেকে কয়লা উত্তোলন হচ্ছে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টন। কিন্তু পার্শ্ববর্তী বড়পুকুরিয়া তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে দৈনিক দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টন কয়লা গ্রহণ করায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার টন কয়লা জমা হচ্ছে। খনির ইয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ইতোমধ্যে জমা পড়েছে বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুত।

তিনি বলেন, 'কয়লা রাখার জন্য খনির উপরিভাগে তিনটি কোল ইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে রয়েছে সেডিমেন্ট কয়লা। বাকি দুটি ইয়ার্ডে কয়লার ধারণক্ষমতা দুই লাখ টন। কিন্তু ইতোমধ্যেই সেখানে আড়াই লাখ টন কয়লার মজুত গড়ে উঠেছে। উত্তোলনের তুলনায় প্রতিদিন তাপবিদু্যৎ কেন্দ্রে অর্ধেক কয়লা সরবরাহ করায় মজুতের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।'

এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে খনিতে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের নামে বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলাগুলো ফের তদন্ত করে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে