শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫, ১৯ বৈশাখ ১৪৩২

৬৩০ কোটি টাকায় ফেনী নদীতে সেতু নির্মাণ প্রস্তাব অনুমোদন

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা কেনা হচ্ছে সয়াবিন তেল, পামওয়েল, মসুর ডাল ও বিভিন্ন ধরনের সার জানুয়ারিতে সব পাঠ্যপুস্তক পাওয়া নিয়ে শঙ্কা
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
৬৩০ কোটি টাকায় ফেনী নদীতে সেতু নির্মাণ প্রস্তাব অনুমোদন

সোনাগাজী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়কে ফেনী নদীর ওপর ৬৩০ কোটি ২১ হাজার ২৭৮ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব অনুমোদনের পাশাপাশি সুনামগঞ্জের হাওড় এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ক্রয়প্রস্তাব পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় প্রকল্প দুটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া এদিন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অধীন এলএনজি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সয়াবিন তেল, পামওয়েল ও মসুর ডাল এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন ধরনের সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

সরকার আগামী ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক দ্রম্নত মুদ্রণ ও সরবরাহের চেষ্টা করছে জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, 'তবে বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতেই সব পাঠ্যপুস্তক পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানুয়ারিতে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।'

তিনি বলেন, 'পাঠ্যবই আমরা দ্রম্নত চাচ্ছি। আজকের বৈঠকে নবম, দশম শ্রেণির পাঠ্যবই মুদ্রণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জেনারেল এডুকেশন পস্নাস মাদ্রাসার (সাধারণ শিক্ষা ও মাদ্রাসার জন্য)। জানুয়ারির মধ্যে আমরা পাঠ্যবই করে ফেলতে বলেছি। চেষ্টা করবে, তবে জানুয়ারির মধ্যে হয়তো সবগুলো করে ফেলতে পারবে না। সভায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।'

জানা যায়, শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রম্নত নতুন পাঠ্যপুস্তক তুলে দিতে নবম ও দশম শ্রেণি এবং ইবতেদায়ির (চতুর্থ ও পঞ্চম) ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৪টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭ হাজার ২২৭ টাকা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) নবম শ্রেণি, দাখিল নবম শ্রেণি ও কারিগারি নবম শ্রেণির বিনামূল্যের ৬ কোটি ২৮ লাখ ৫১ হাজার ৫৪০টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবারের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ২১১টি দরপত্রের মাধ্যমে এই পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৫২৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ৪৭৫ টাকা। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এই পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের প্রস্তাব আসে।

সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে মাধ্যমিক বাংলা ভার্সন ১০, শ্রেণির এক কোটি ১০ হাজার ৯৮১টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। বিনামূল্যের এই পাঠ্যপুস্তক ৩৬টি দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। এতে মোট ব্যয় হবে ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ২২ হাজার ৫৭৯ টাকা।

এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আরেক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের

ইবতেদায়ি (চতুর্থ ও পঞ্চম), মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) দশম শ্রেণি, দাখিল দশম শ্রেণি ও কারিগরি দশম শ্রেণির বিনামূল্যের ৫ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ১০৩টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। ১৫২টি দরপত্রের মাধ্যমে এই পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৪২৩ কোটি ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ১৭৩ টাকা।

ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ

সভা সূত্র জানায়, 'সোনাগাজী ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল সংযোগ সড়কে ফেনী নদীর ওপর সেতু নির্মাণ (১ম সংশোধিত)' পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের দরপত্রে চারটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। চারটি প্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসির সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) আরবিসিজি এবং (২) এনডিই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

সভায় 'হাওড় এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন' প্রকল্পের ক্রয় কাজে পুনঃদরপত্র আহ্বান সংক্রান্ত প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

বছরের প্রথম আসছে এলএনজি

নতুন বছরের জন্য খোলা বাজার থেকে প্রথম কেনা হচ্ছে এলএনজি। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম পড়ছে ১৫ দশমিক শূন্য ২ ডলার। বুধবারের সভায় এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভার আলোচ্য সূচি থেকে জানা যায়, সিঙ্গাপুরের কোম্পানি ভিটল এশিয়া আগামী ৪ থেকে ৫ জানুয়ারির মধ্যে এই দামে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতি ইউনিট ১৫ দশমিক ২ ডলার হিসাবে এতে মোট খরচ হবে ৭০৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৮০ টাকা।

এছাড়া আবু ধাবির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানির (এডনক) কাছ থেকে ২০২৫ সালের জন্য ৬ লাখ টন মারবান গ্রেডের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাতে খরচ হবে ৫ হাজার ২০৮ কোটি টাকা।

সৌদি আরবের কোম্পানি সৌদি আরামকোর কাছ থেকে ৭ লাখ টন এরাবিয়ান লাইট ক্রুড কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাতে ৬ হাজার ২৫ কোটি টাকা খরচ হবে।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় ইউনিপ্যাক সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওকিউ ট্রেডিংয়ের কাছ থেকে জানুয়ারি থেকে জুন মাসের জন্য পরিশোধিত জ্বালানি কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

কেনা হচ্ছে সয়াবিন, পাম ওয়েল ও মসুর ডাল

অর্থ উপদেষ্টা জানান, স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৩৮ লাখ ১০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল এবং ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পাম অয়েল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য ব্যয় হবে ১৯৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এছাড়া ৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা দিয়ে ১০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এস আলম সুপার এডিবল অয়েল এই তেল সরবরাহ করবে।

\হবৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা তাড়াতাড়ি প্রসেস করে, যৌক্তিক যে জিনিসগুলো ক্রয় করা প্রয়োজন সেগুলো অনুমোদন দিয়ে থাকি। আজকে আমরা বিভিন্ন ধরনের সার কেনার অনুমোদন দিয়েছি। এলএনজি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দিয়েছি।'

সভা সূত্র জানায়, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ৩৮ লাখ ১০ হাজার লিটার পরিশোধিত লুজ সয়াবিন তেল ক্রয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে এই সয়াবিন তেল কেনা হবে। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয়েছে ১৪০ টাকা। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আর এক প্রস্তাবে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার লুজ পাম অয়েল কেনার প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। এই প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড থেকে এই পাম অয়েল কেনা হবে। প্রতি লিটার পাম অয়েল'র দাম ধরা হয়েছে ১৩০ টাকা। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪৩ কোটি টাকা। এই পাম অয়েলও টিসিবির জন্য কেনা হবে।

এছাড়া ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের জন্য ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার আর একটি প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি এ প্রস্তাবটিও অনুমোদন দিয়েছে। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয়েছে ৯৫ টাকা ৯৭ পয়সা। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। রাজশাহীর নাবিল নবা ফুডস লিমিটেড থেকে এই মসুর ডাল কেনা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে