রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২
নিম্নচাপ লঘুচাপে পরিণত নামল সতর্ক সংকেত

উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত

যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত
উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত

ডিসেম্বরের শেষেভাগে এসে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। হিমালয় থেকে আসা হাড় কাঁপানো হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় জবুথবু হয়ে পড়ছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। কুয়াশার তীব্রতায় কারণে দিনেও সড়কে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে। এদিকে রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অন্যদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যানবাহন। রোববার সকালে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে চারটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষ।

আবহাওয়া অফিস জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ সুস্পষ্ট নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর ফলে আকাশে মেঘ থাকায় কুয়াশার উপস্থিতি বাড়ছে। সেইসঙ্গে উত্তর থেকে ধেয়ে আসা শীতল বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। নিম্নচাপ সরে গেলে তাপমাত্রা আরও নিম্নগামী হয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, হিমালয়ের নিকটবর্তী সীমান্ত ঘেঁষা জেলাগুলোতে শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব বেশি থাকে। এবার হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশা ঠান্ডার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে।

নিম্নচাপ লঘুচাপে পরিণত, নামল সংকেত

এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। ফলে দেশের চার সমুদ্রবন্দরের সতর্কতা সংকেতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান বলেন, 'বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপটি ছিল, সেটি নেই। তাই সতর্কতা সংকেত নামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

গত সোমবার রাতে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হয়, যেটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ দশা পেরিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় নিম্নচাপে পরিণত হয়। এর প্রভাবে শুক্র ও শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হয়; কোথাও কোথাও দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি।

নিম্নচাপ দশায় শনিবার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছিল। তবে রাতে নিম্নচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হওয়ায় চার সমুদ্রবন্দরকে সংকেত নামাতে বলা হয়।

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি পূর্ব-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে শনিবার রাত ৯টায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হয়ে সাগরে লঘুচাপে পরিণত হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান জানান, রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ে রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মেঘনা নদীতে ২ লঞ্চের সংঘর্ষ

ঘন কুয়াশায় মেঘনা নদীতে ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে যাত্রীবাহী দুইটি লঞ্চের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুটি লঞ্চগুলোর অগ্রভাগসহ বিভিন্ন কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। শনিবার রাত সোয়া ২টা থেকে আড়াইটার দিকে এমভি কীর্তনখোলা-১০ ও এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয় বলে জানিয়েছেন বিআইডবিস্নউটিএ বরিশালের উপ-পরিচালক ও নদী বন্দর কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক।

রোববার সকাল ১০টায় তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চের মধ্যে এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে সক্ষম হলেও এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ নামের অপর লঞ্চটি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি নিরাপদ স্থানে রাতভর নোঙর করে রাখা হয়।

পরে রোববার সকালে এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের ৫৮০ জন যাত্রীকে এমভি শুভরাজ-৯ লঞ্চের মাধ্যমে বরিশালে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে, সকাল ১০টায় ঢাকা সদরঘাট দপ্তরের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, 'এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি সকালে যাত্রীদের নিয়ে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছেছে। দুর্ঘটনার কারণে স্বাভাবিক সময়ের থেকে কিছুটা বিলম্বে লঞ্চটি ঢাকায় পৌঁছে।'

এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের যাত্রী মনির হোসেন বলেন, 'তাদের বহনকারী লঞ্চটি মেঘনা নদী দিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। আর গভীর রাতে নদীতে এত ঘন কুয়াশা ছিল, যে একহাত সামনেও দেখা যাচ্ছিলো না। এর মাঝেই হঠাৎ করে বরিশালগামী এমভি প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের অগ্রভাগের সাথে আমাদের বহনকারী এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের অগ্রভাগের বিকট শব্দে সংঘর্ষ হয়।'

তিনি বলেন, 'এতে উভয় লঞ্চের সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে চালক কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চকে তাৎক্ষণিক নদী তীরে নিয়ে ভাসিয়ে রাখে। পরে সবকিছু চেক করে আবার ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।'

তিনি আরও বলেন, 'সংঘর্ষে এমভি কীর্তনখোলা ১০ লঞ্চের শুধু সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন নয়, লঞ্চটির সামনে রাখা যাত্রীদের ২০টির বেশি মোটরসাইকেলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কোনো যাত্রী হতাহতের খবর পাইনি।'

এদিকে প্রিন্স আওলাদ-১০ লঞ্চের যাত্রী মেহেদী হাসান বলেন, 'মাঝরাতে বিকট শব্দ আর লঞ্চ দুলে ওঠার আতঙ্কে ঘুম ভেঙে যায়। কেবিন থেকে বের হয়ে দেখি ঘন কুয়াশা, একহাত সামনেও কিছু দেখা যাচ্ছে না। পরে লঞ্চের সামনের অংশে গিয়ে দেখি কীর্তনখোলা-১০ নামের অন্য একটি লঞ্চের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ফ্যান্টারের নীচের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আওলাদ-১০ লঞ্চের চালক সেটিকে চরে তুলে দেয়। শুনেছি নীচের একটি অংশ থেকে পানিও লঞ্চের ভেতরে প্রবেশ করছিল, তাই ঝুঁকি এড়াতে লঞ্চটি আর চালনা করা হয়নি।'

লঞ্চের যাত্রীরা বলছেন, বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোয় ফগ লাইট, রাডার, ইকো সাউন্ডার, ভিএইচএফসহ আধুনিক নৌ-সরঞ্জাম থাকার পরও এমন সংঘর্ষ ঘটায় তারা অনেকটাই হতবাক। ঘটনার সময় যন্ত্রপাতিগুলো সচল ছিল কিনা, কিংবা এগুলো চালানো হচ্ছিল কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সেইসঙ্গে হাজার যাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ায় দায়িত্ব অবহেলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে